মুর্শিদাবাদঃ জঙ্গিপুরের তৃনমূল বিধায়ক জাকির হোসেনের বাড়ি থেকে উদ্ধার ১১ কোটি টাকা। বুধবার দিনভর তল্লাশি চালানো হয় বিধায়কের বিড়ি কারখানায়। চারটি বিড়ি কারখানা থেকে প্রায় ১১ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
আয়কর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ৪টি জায়গা থেকে এ পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের বাড়ি, অফিস, কারখানা ও গুদাম থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১১ কোটি টাকা। তৃণমূল বিধায়কের শুধুমাত্র একটি অফিস থেকেই ৯ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। এত টাকা কোথা থেকে এল? এভাবে নগদ টাকা কেন লুকিয়ে রাখা হয়েছিল? সবই খতিয়ে দেখছে আয়কর দফতর।
বুধবার সকাল দশটা নাগাদ আয়কর দফতরের ১০-১২ জনের দল সামশেরগঞ্জে ঢোকে ৷ তাদের সঙ্গে ছিল বিএসএফ জওয়ান । সামশেরগঞ্জ ও সুতি ব্লকের একাধিক জায়গায় শুরু হয় তল্লাশি অভিযান ৷ তল্লাশির তালিকায় ছিল জাকির হোসেনের বাড়ি, ডিব বিড়ি ফ্যাক্টরি, তেল মিল ও রাইস মিল ৷ জাকির হোসেনের বাড়ি-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু নথি ৷ সেই নথিপত্র থেকে আয়কর দফতরকে আয়কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷ প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে চলে অভিযান ৷ রাত ৮টা নাগাদ বাহিনী নিয়ে রওনা দেয় আয়কর দফতরের আধিকারিকরা ৷ এরপরে সংবাদমাধ্যমের সামনে জাকির হোসেন বলেন, “আমি তদন্তে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছি ৷”
তিনি আরও বলেন, “তাঁরাও (আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা) সহযোগিতা করেছেন ৷” তিনি দাবি করেন, “আমাদের খাতায়-কলমে সব ঠিক আছে ৷ আমি ব্যবসায়ী ৷ আমি সবসময় কর দিয়ে ব্যবসা করি ৷ আমি জেলায় সর্বোচ্চ আয়কতদাতা ৷” কতজন তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন ? এ প্রশ্নের উত্তরে জঙ্গিপুরের তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “আমি গুনিনি ৷ তবে ১০-১২ জন এসেছিলেন ৷ আর সব মিলিয়ে ২০-২৫ জন ৷ তাঁরা সব জায়গায় গিয়েছিলেন ৷” এর মধ্যেও তিনি স্বীকার করে নেন, “ব্যবসা করলে উনিশ-বিশ হয়তো থাকতে পারে ৷ ব্যবসা করলে এরকম হয় ৷ কিন্তু আমি মনে করি, আমি সব আয়কর দিয়েছি ৷ তাতে কোনও ত্রুটি নেই ৷” আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা লিখে দিয়ে গিয়েছেন যে, জাকির হোসেন তদন্তে সহযোগিতা করেছেন । সে সময় একথাই জানিয়ে ছিলেন জাকির হোসেন ৷
আরো পড়ুন- বিড়ি শ্রমিক থেকে কিভাবে ধনকুবের হলেন তৃণমূল বিধিয়ক, কেমন ছিল জাকিরের সফর ?
তবে এই বিপুল পরিমাণে নগদ টাকা নিয়ে যাওয়ায় তিনি কর্মীদের বেতন দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রকাশ করেন ৷ জাকির হোসেন (Jakir Hossain faces labour problem after income tax raid) বলেন, “আমাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে হয় ৷ সব জায়গায় তা বন্ধ হয়ে যাবে ৷ সেই জন্য বাড়িতে এই টাকাটা ছিল ৷ তা দেখানো ছিল অর্থাৎ খাতায়-কলমে দেখানো ৷ ব্যাঙ্ক থেকে তোলা টাকা ৷” তিনি জানান, রাইস মিলে চাষিদের নগদ টাকা দিতে হয় ৷ এছাড়া বিড়িশ্রমিকদের নগদ টাকা দিতে হয়, তেলমিলেও নগদ টাকা দিতে হয় ৷ তিনি বলেন, “চাষবাসের ক্ষেত্রে এবং বিড়ি শ্রমিকরা সাধারণ পড়াশোনা জানেন না ৷ তাই তাঁদের পুরো টাকাটাই নগদে দিতে হয় ৷”