প্রতি বছরই বাড়ছে শিবলিঙ্গের দৈর্ঘ্য! মাতঙ্গেশ্বর মন্দিরে শিবলিঙ্গের রহস্যে আজও অবাক হয় ভক্তরা। মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহে অবস্থিত হাজার বছরের পুরনো মাতঙ্গেশ্বর মন্দির বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলের এক বিশ্বাসের কেন্দ্র। মূল মন্দিরের পশ্চিম দিকে বিশাল মন্দিরের ভিতরে একটি বিশাল শিবলিঙ্গ স্থাপন করা হয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে ৬ ফুট উঁচু জলহরির উপরে একটি ৯ ফুট উঁচু শিবলিঙ্গ রয়েছে। এই শিবলিঙ্গটিই ভক্তদের কাছে অবাক হওয়ার কারণ।
বিশ্বাস করা হয় যে মন্দিরে উপস্থিত এই শিবলিঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রত্যেক বছর শারদ পূর্ণিমার দিনে এক ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পায়। এখানকার কর্মকর্তারা একটি পরিমাপ টেপ দিয়ে এটি পরিমাপ করেন। মাতঙ্গেশ্বর মহাদেব মন্দিরের পুরোহিত বলেন, এখানকার শিবলিঙ্গ মাটির ভেতরে ৯ ফুট এবং বাইরেও একই। বিশ্বাস করা হয় যে , মন্দিরে উপস্থিত এই শিবলিঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রতি বছর শারদ পূর্ণিমার দিনে এক ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পায়। প্রতি বছর, কার্তিক মাসের শারদ পূর্ণিমার দিনে, শিবলিঙ্গের দৈর্ঘ্য তিল বীজের আকারে বৃদ্ধি পায়। শিবলিঙ্গের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে পর্যটন দফতরের কর্মীরা নিয়মিত একটি পরিমাপ টেপ ব্যবহার করেন। অলৌকিকভাবে শিবলিঙ্গটি আগের চেয়ে লম্বা পাওয়া যায়।
ইতিহাস ঘাঁটলে বোঝা যায়, মন্দিরটি এক হাজার বছর আগে নবম শতাব্দীতে চান্দেলা রাজাদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। শিবলিঙ্গ অভিষেক করতে ভক্তদের ৬ ফুট উঁচু জলহরিতে উঠতে হয়। এরপরেই শিবলিঙ্গের জলাভিষেক হয়। মহাশিবরাত্রি উৎসব, মকর সংক্রান্তি ও অমাবস্যায় হাজার হাজার ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসেন।
এই জনপ্রিয় ও ঐতিহাসিক বিখ্যাত মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, গোটা মন্দিরটি একটি বিশেষ রত্নপাথরের উপর নির্মিত হয়েছে। আর এটাই নাকি অলৌকিক ঘটনার পিছনে কারণ। এই রত্নটি স্বয়ং শিব সম্রাট যুধিষ্ঠিরকে দিয়েছিলেন। প্রতিটি ইচ্ছা পূরণ করেন মহাদেব। পরবর্তীকালে যুধিষ্ঠির এই বিশেষ রত্ন মাতঙ্গ ঋষিকে দান করেন।
এই রত্ন ঋষি মাতঙ্গ থেকে বুন্দেলখণ্ডের চণ্ডাল রাজা হর্ষবর্মনের কাছে এসেছিলেন। যিনি জনকল্যাণের জন্য এই রত্নটিকে মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিলেন। একই স্থানে মাতঙ্গেশ্বর মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
সকলের মনোবাঞ্ছা পূরণকারী এই রত্নটির কারণে এখানে আসা প্রতিটি মানুষের ইচ্ছা পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। মাতঙ্গ ঋষির নামানুসারে এই মন্দিরের নাম হয় মাতঙ্গেশ্বর।
প্রতি বছর এই শিবলিঙ্গের আকৃতি এক ইঞ্চি করে বাড়তে শুরু করে। আর তাই ছোট শিবলিঙ্গ থেকে এখন বিরাট বড় শিবলিঙ্গে পরিণত হয়েছে। এই অলৌকিক ঘটনা দেখে ভিড় করতে শুরু করে। মানুষ এই শিবলিঙ্গকে মৃত্যুঞ্জয় মহাদেব নামেও চেনেন।
তারপর থেকে আজ পর্যন্ত শিবলিঙ্গের আকার বেড়েই চলেছে। সারা বছরই এখানে ভক্তরা ভোলেনাথের অভিষেক করে পুজো করতে থাকেন।