Dhanyakuria: বাসিরহাটের ঐতিহাসিক ধান্যকুড়িয়া - Ei Bangla
Ei Bangla ব্লগ Dhanyakuria: বাসিরহাটের ঐতিহাসিক ধান্যকুড়িয়া

Dhanyakuria: বাসিরহাটের ঐতিহাসিক ধান্যকুড়িয়া


আজ থেকে প্রায় দুশো তিরিশ বছর আগের কথা। সুবিশাল এই রাজবাড়ি বানিয়েছিলেন ধান্যকুড়িয়ার (Dhanyakuria) জমিদার মহেন্দ্রনাথ গায়েন। সেসময় ফুলেফেঁপে উঠেছিল তাঁর পাটের ব্যবসা। মূলত ইংরেজদের সঙ্গেই চলত তাঁর লেনদেন। আর সেই সুবাদেই উত্তর ২৪ পরগণার এই প্রান্তিক অঞ্চলেও নিত্যদিন লেগে থাকত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবদের আনাগোনা। তাঁদের বিলিতি সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে উস্কে দিতেই ইউরোপীয় দুর্গের আদলে এই রাজবাড়ি নির্মাণ করেন মহেন্দ্রনাথ।

৩০ একর জায়গায় জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই রাজবাড়ির মধ্যেই রয়েছে আস্ত এক পুষ্করিণী, যাতে রাজবাড়ির প্রতিচ্ছবি ঝলমল করে সারাদিন। গোটা দুর্গটিকে কেন্দ্র করে রয়েছে বিশাল এক বাগানও। দুর্গের ভেতরে ঢুকলেও রীতিমতো চমকে যেতে হবে। নানা ধরনের ভিক্টোরিয়ান কারুকাজ থেকে শুরু করে রয়েছে ইতালিয় কাচের তৈরি আসবাব। যা এক কথায় মন্ত্রমুগ্ধকর।

                       ধান্যকুড়িয়া

গ্রীষ্মকালে এই রাজবাড়িতে এসে অনেক সময়ই ছুটি কাটাতেন ব্রিটিশ সাহেবরা। তাঁদের জন্য ছিল পৃথক নহবতখানা, অতিথিশালা। এমনকি সেসময় এই রাজবাড়ির জন্য পৃথক রেল স্টেশনও তৈরি করেছিল মার্টিন কোম্পানি। গায়েন গার্ডেন নামের সেই স্টেশনে এসে থামত ন্যারো গেজের ছোট্ট বাষ্পচালিত ট্রেন। বর্তমানে অবশ্য সেই স্টেশনের অস্তিত্ব নেই আর। ২০০৮ সালে তা অধিগ্রহণ করে সরকার। গড়ে ওঠে অনাথ মেয়েদের সরকারি হোম। তবে মূল বাড়িটির কিছু অংশের পুনর্নির্মাণ হলেও, সামগ্রিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যটি। বাড়ির সামনে অবস্থিত শ্বেত পাথরের দুটি সিংহ মূর্তির একটি চুরি গিয়েছিল বহু আগেই। কয়েক বছর আগে আরেকটি সিংহও চড়া দামে বিক্রি করে দেন মহেন্দ্রনাথের উত্তরসূরিরা। তবে শুধু ঔপনিবেশিক ইতিহাসই নয়, এই বাড়িতে শুটিং হয়েছে ‘সত্যান্বেষী’, ‘সাহেব-বিবি-গোলাম’, ‘সূর্যতপা’-সহ একাধিক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রেরও। অভিনয় করে গেছেন স্বয়ং উত্তমকুমার। এমনকি বিদেশি বিভিন্ন চলচ্চিত্রেরও শুট হয়েছে এই দুর্গেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী ও তৎকালীন বাংলাজাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী ও তৎকালীন বাংলা

রানা চক্রবর্তীঃ আকবরের মৃত্যুর পরে শাহজাদা সেলিম ‘জাহাঙ্গীর’ নাম নিয়ে মোঘল মসনদে আরোহণ করবার পরে রাজা মান সিংহ বাংলায় তাঁর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবার জন্য পুনরায় রাজমহলে ফিরে এসেছিলেন। তিনি

সেকালের হাওড়া জেলার কবিয়ালসেকালের হাওড়া জেলার কবিয়াল

রানা চক্রবর্তীঃ হাওড়া জেলার প্রাচীনতম জনপদটির নাম হল শালিখা, যেটি বর্তমানে সালকিয়া নাম পরিচিত। অতীতে সেই প্রাচীন জনপদে এমন কিছু প্রতিভাবান মানুষ বাস করতেন, যাঁদের প্রতিভার আলোকে সারা বাংলা আলোকিত

হোসেনশাহী বংশের উত্থানহোসেনশাহী বংশের উত্থান

রানা চক্রবর্তীঃ গৌড়-বঙ্গে হাবসী যুগের শেষ সুলতান ‘সামসুদ্দীন মুজাফরের’ আততায়ী হোসেন শাহ আরব ভাগ্যান্বেষী ‘সৈয়দ আসরাফের’ পুত্র ছিলেন। অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে আসরফ বঙ্গদেশে এসেছিলেন, কিন্তু কোথাও কিছু সুবিধা না

স্বামীজীর ছায়ায় শ্রীঅরবিন্দস্বামীজীর ছায়ায় শ্রীঅরবিন্দ

রানা চক্রবর্তীঃ ‘রোমাঁ রোলাঁ’ শ্রীঅরবিন্দকে ‘নব ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। (Prophets of the New India) ‘বুদ্ধিজীবী’ বলতে যদি তাঁদেরই বোঝায় যাঁরা নিজেদের ‘বুদ্ধি’ ও ‘প্রজ্ঞা’ দিয়ে জগৎকে বুঝতে