এমন ভাবে হত্যা করতে হবে যাতে শিশুদের রক্ত ছিটকে গিয়ে তার মুখের উপর পরে! ৮০০ নিষ্পাপ শিশুর হত্যাকারী ফরাসি সৈনিক গিলেস ডি রাইস - Ei Bangla
Ei Bangla ব্লগ এমন ভাবে হত্যা করতে হবে যাতে শিশুদের রক্ত ছিটকে গিয়ে তার মুখের উপর পরে! ৮০০ নিষ্পাপ শিশুর হত্যাকারী ফরাসি সৈনিক গিলেস ডি রাইস

এমন ভাবে হত্যা করতে হবে যাতে শিশুদের রক্ত ছিটকে গিয়ে তার মুখের উপর পরে! ৮০০ নিষ্পাপ শিশুর হত্যাকারী ফরাসি সৈনিক গিলেস ডি রাইস


কথা বলা হয় যে মানুষের রূপ চেনা বড় দুষ্কর। আর এই কথাটির জলজ্যান্ত প্রমান হচ্ছে ১৪০৪ সালে ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করা গিলস ডি রাইস নামক এই ব্যক্তি। তিনি ফ্রান্সের একজন মার্শাল, দেশের অন্যতম ধনী, সাহসী অভিজাত, সংস্কৃতিবান, পরিশীলিত এবং ধার্মিক ব্যাক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

জগদ্বিখ্যাত জোয়ান অফ আর্কের সহযোদ্ধা হিসাবে ১৪২৯ সালে ১০০ বছরের যুদ্ধে তিনি ফ্রান্সের পক্ষ থেকে লড়েছিলেন ব্রিটেনের বিপক্ষে। জগদ্বিখ্যাত জন অব আর্কের সাথে মাত্র ২০০ নাইট কে সঙ্গে নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং এই যুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষ থেকে নিজেদের পক্ষে জয় ছিনিয়ে নিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।

তাই এটা বোঝার আর বাকি থাকে না যে, তিনি একজন শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান যোদ্ধাও ছিলেন।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের কণ্যাকে বিবাহ করেছিলেন রাইস। দেশের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। ৫ টি বিশাল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। এছাড়াও তার একটি ব্যক্তিগত প্রার্থনালয় ছিল। সেখানে ধর্মীয় যাজক ছিল প্রায় ৩০ জন। তিনি এতটাই সম্মানিয় ব্যক্তি ছিলেন যে ফ্রান্সের আদালত তাকে মার্শালের পদে নিযুক্ত করেছিলেন যাতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ফ্রান্সের রাজা চার্লস সপ্তমকে মুকুট দিতে পারেন।

তিনি নিজেকে যেভাবে সমাজের কাছে তুলে ধরেছিলেন সেটি তিনি আদতে ছিলেন না। অর্থাৎ তার এই ভালো এবং গুণী ব্যাক্তিত্বের আড়ালে ছিল এক ভয়ানক ব্যাক্তিত্ব যা দীর্ঘ সময় ধরে জনসমক্ষে আড়ালেই থেকে গিয়েছিল।

তবে কথায় বলা হয় যে সত্য কখনোই চেপে থাকে না। ঠিক সেটাই ঘটেছিল ছিল রাইসের সাথেও। ফ্রান্সের মানুষদের কাছে উন্মুক্ত হয়ে গেল তার কুৎসিত রূপ। তিনি আসলে ছিলেন একজন শিশু হত্যাকারী। আর তার এই নৃশংস কর্মকাণ্ডের কথা উঠে এসেছিল সাধারণ মানুষের সামনে যা ছিল কল্পনারও বাইরের বিষয়।

জানা যায় যে আনুমানিক প্রায় ৮০০ শিশুকে গিলেস ডি রাইস নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত রক্তপাতের প্রতি আসক্ত ছিলেন। যার কারণে তার প্রাসাদের আশে-পাশে যেসমস্ত গরীব-অনাথ শিশুরা খেলতে আসত তাদেরকে অপহরণ করে নিজের প্রাসাদে নিয়ে যেতেন। এরপর তিনি তার ভৃত্যদের আদেশ দিতেন ছুড়ি দিয়ে এই শিশুদের হত্যা করার। তবে এমন ভাবে হত্যা করতে হবে যাতে শিশুদের রক্ত ছিটকে গিয়ে তার মুখের উপর পরে।

১০ বছর আগে ধর্মদ্রোহিতার জন্য মৃত্যুদন্ড হয়েছিল জোয়ান অফ আর্কের আর এই একই অভিযোগ উঠেছিল গিলেস ডি রাইসের বিরুদ্ধে একজন পুরোহিতকে আক্রমণ করার কারণে। তবে তিনি আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।

অভিযোগকারী সেই ধর্মযাজকের ভাষায় তিনি ছিলেন একজন যাদুকর, ধর্মবাদী, মন্দ আত্মার আহ্বানকারী, নির্দোষদের হত্যাকারী, ভবিষ্যদ্বাণীকারী, সোডোমাইট, বিশ্বাস থেকে ধর্মত্যাগী, মূর্তিপূজক।

সেই সময় তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা খুবই স্বাভাবিক কারণ ছিল চার্চের পক্ষে। কারন তিনি একটি ধর্মীয় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন চার্চের বিরুদ্ধে। যার কারণে চার্চের জন্য হুমকি ছিলেন গিলেস ডি রাইস। এছাড়াও ওই অপরাধে যদি গিলেস ডি রাইসকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় তাহলে তার সকল জমি ও বিশাল সম্পত্তি চলে যাবে চার্চের অধিনে।

সত্য কথা উদঘাটন করার জন্য চার্চ গিলেস ডি রাইসের ভৃত্যদের উপর প্রচুর নির্যাতন করে। তবে প্রথমে তাদের মালিকের বিরুদ্ধে তারা প্রমান দিতে রাজি ছিলেন না। এই নির্যাতনের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন গিলেস ডি রাইস। তবে তিনি নিজে একটি সম্পূর্ণ জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এরপরই তার বিরুদ্ধে ১৪০ টি শিশু হত্যা করার অভিযোগ আনা হলেও আসলে তিনি হত্যা করেছিলেন প্রায় ৮০০ শিশুকে।

কিন্তু কেন এমন ঘৃণ্য কাজ করেছিলেন গিলেস ডি রাইস তা আজও অমীমাংসিত হয়ে রয়ে গেছে। তবে এই কর্মকাণ্ডের পিছনের কারন হিসাবে ঐতিহাসিকগণ দুটি যৌক্তিক কারণ বের করেছিলেন।

প্রথম যুক্ত অনুযায়ী, সুয়েটোনিয়াসের লাইভস অফ দ্য সিজারস-এর একটি সচিত্র কপি নামক এই বইয়ের প্রভাব পড়েছিল তার উপর। এই বইটি পাগল সম্রাট ক্যালিগুলার দুঃখজনক বাড়াবাড়ির গ্রাফিক বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

দ্বিতীয়ত গিলেস ডি রাইস একজন ইতালীয় অ্যালকেমিস্ট এবং ফ্রান্সিসকো প্রেলাতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি তাকে কালো জাদুর আচার এবং বলিদানের মাধ্যমে লোহাকে সোনায় পরিণত করার গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

গিলেস ডি রাইসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি তার মৃত্যুর আগে হত্যা করা শিশুদের বাবা মায়ের কাছে ক্ষমা চান। জন অব আর্কের মতোই তাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। কিন্তু তার এই সহজ স্বীকারোক্তির জন্য তাকে একটু কম শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল অর্থাৎ তাকে হত্যা করার পর ১৪৪০ সালের ২৬ অক্টোবর তার দেহকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তিনি কত শিশুকে হত্যা করেছিলেন, এই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

লেখাপড়া করে যে……..‌লেখাপড়া করে যে……..‌

স্বপন সেনঃ “লেখাপড়া করে যে,গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে”….! আচ্ছা বলুনতো কে লিখেছেন এই পংক্তিটি… ? বাংলা ভাষায় শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার উপযোগী পড়ার বই প্রথম রচনা করেন ইনি। তাঁর ‘শিশুশিক্ষা’ গ্রন্থটি

বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিনবিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিন

এটাই সেই ইঞ্জিন; ১ লাখ ৯ হাজার হর্সপাওয়ার শক্তি-সম্পূর্ণ Wartsila sulzer RTA96-C বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিন! ● নির্মাতা কোম্পানি: Built in Finland ● এটার ওজন ২,৩০০টন এবং ৪৪-ফুট

সেকালের হাওড়া জেলার কবিয়ালসেকালের হাওড়া জেলার কবিয়াল

রানা চক্রবর্তীঃ হাওড়া জেলার প্রাচীনতম জনপদটির নাম হল শালিখা, যেটি বর্তমানে সালকিয়া নাম পরিচিত। অতীতে সেই প্রাচীন জনপদে এমন কিছু প্রতিভাবান মানুষ বাস করতেন, যাঁদের প্রতিভার আলোকে সারা বাংলা আলোকিত

ব্ল্যাক হোলের অজানা রহস্য। – দ্বিতীয় পর্বব্ল্যাক হোলের অজানা রহস্য। – দ্বিতীয় পর্ব

কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতরে গেলে ঠিক কি দেখতে পাবো আমরা ? হ্যাঁ এই মোক্ষম আর অমোঘ প্রশ্নটা শুধুমাত্র সাধারণ পাঠকদের মনের মধ্যেই নয় এমনকি খোদ মহাকাশ বিজ্ঞানিদের মনের মধ্যেও ঘুরপাক খাচ্ছে