বাড়ছে না পিএফের আওতায় থাকা প্রবীণ নাগরিকদের পেনশন। বছরের পর বছর ধরে উঠতে থাকা এই দাবিতে কর্ণপাতই করছে না কেন্দ্র। যুক্তি একটাই—টাকা নেই। সম্প্রতি মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রক সংসদেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পেনশন বাড়াতে পারব না। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। কারণ, পিএফ দপ্তরের হাতে থাকা পেনশন তহবিলের অঙ্কটা শুধুই বিপুল নয়, প্রতি বছর তা লাফিয়ে বাড়ছে। তাই টাকা না থাকার যুক্তিটা পেনশনভোগীদেরও বোধগম্য হচ্ছে না। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, টাকা না থাকার মতো যুক্তিকে ঢাল করে যদি পেনশন না বাড়ে, তাহলে মোদি জমানায় এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চারটি কমিটি তৈরির প্রহসনের দরকার ছিল কি? কারণ, উল্লিখিত সবক’টি কমিটিই পেনশন বৃদ্ধির সুপারিশ জানিয়েছিল।
আরো পড়ুন- বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রাথমিকে আরও ৩ শিক্ষকের চাকরি গেল
দেশে প্রায় ৭০ লক্ষ পেনশনভোগী আছেন, যাঁরা পিএফ থেকে পেনশন পান। মোদি সরকারেরে দাবি, তাঁদের আমলে ন্যূনতম পেনশন এক হাজার টাকা করা হয়েছে। অথচ অভিযোগ, নানা অজুহাতে সেই টাকা কয়েক লক্ষ পেনশনভোগীকে দেওয়া হয় না। সম্প্রতি সাংসদ মুজিবুল্লা খান সংসদে অর্থমন্ত্রকের কাছে জানতে চান, পিএফের পেনশন কেন বাড়ানো হচ্ছে না? তার উত্তরে জানানো হয়, সরকারের প্রচুর খরচ। করোনার কারণে মারাত্মক আর্থিক বোঝা এবং কেন্দ্রীয় রাজকোষের ভাঁড়ে মা ভবানী দশার জন্য পেনশন বাড়ানো সম্ভব নয়।
পরিস্থিতি কি সত্যিই তাই? তথ্য জানার অধিকার আইনে মোদি সরকারেরই উত্তর, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ইপিএফওর হাতে থাকা পেনশন ফান্ডে মোট ৫ লক্ষ ৭৯ হাজার কোটি টাকা জমা ছিল। সেই টাকা বাজারে খাটিয়ে তারা প্রতি মাসে ২৯ হাজার কোটিরও বেশি আয় করেছে। ফলে এক বছরের মাথায় তহবিল বেড়ে হয়েছে ৬ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তহবিল যত বাড়ছে, তা বাজারে খাটিয়ে মাসিক আয়ের পরিমাণও ততধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও ‘টাকা না থাকা’র যুক্তিতেই অবশ্য অনড় কেন্দ্র। ইপিএস-৯৫ স্কিমের আওতায় যাঁরা আছেন, তাঁদের সর্বভারতীয় সংগঠন ন্যাশনাল অ্যাজিটেশন কমিটির রাজ্য শাখার সভাপতি তপন দত্ত বলেন, ‘কেন্দ্রের টাকা না থাকার যুক্তি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। তার কারণ, ইপিএফওয়ের কাছে যে তহবিল আছে, তাতে পেনশন সহজেই বাড়ানো যায়। তার জন্য অর্থমন্ত্রকের মাথাব্যথার কারণ নেই। আমাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সরকার নিজেই জানিয়েছে, শুধু তহবিল বাজারে খাটিয়ে যে আয় হয়, তার সামান্য অংশই পেনশন দিতে খরচ হয়। তাহলে পেনশন বাড়াতে অসুবিধা কোথায়? একজন কর্মী কর্মজীবনে যে টাকা প্রতি মাসে পেনশন ফান্ডে জমা করেন, তাতে তাঁর অধিকার নেই? পেনশনভোগী মারা গেলে, অর্ধেক পেনশন দেওয়া হয় স্ত্রীকে। তিনি মারা গেলে পেনশন ফান্ডের পুরো টাকাটাই সরকারের। কারণ সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। এরপরও সরকারের ন্যূনতম পেনশন না বাড়ানোর যুক্তি হাস্যকর। সম্প্রতি উচ্চসীমার পেনশন বাড়ানোর জন্য সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাকেও মানতে চাইছে না কেন্দ্র। হকের টাকা না দেওয়ার জন্য অবাস্তব যুক্তি সামনে আনা হচ্ছে। আমরা রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ করব।’