ব্ল্যাক হোলের অজানা রহস্য। - দ্বিতীয় পর্ব - Ei Bangla
Ei Bangla ব্লগ ব্ল্যাক হোলের অজানা রহস্য। – দ্বিতীয় পর্ব

ব্ল্যাক হোলের অজানা রহস্য। – দ্বিতীয় পর্ব


কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতরে গেলে ঠিক কি দেখতে পাবো আমরা ? হ্যাঁ এই মোক্ষম আর অমোঘ প্রশ্নটা শুধুমাত্র সাধারণ পাঠকদের মনের মধ্যেই নয় এমনকি খোদ মহাকাশ বিজ্ঞানিদের মনের মধ্যেও ঘুরপাক খাচ্ছে বহু বছর ধরে। কিন্তু সমস্যা হলো এই যে কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতরে ঠিক কোন বিস্ময় অপেক্ষা করে রয়েছে আমাদের সবার জন্য তা সম্ভবত থেকে যাবে চির অজানা রহস্যের ঘন কুয়াশার অন্তরালে। এর কারণ কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতরে কোন প্রাণী বা বস্তুর পক্ষে একবার প্রবেশ করে আর ফিরে আসা অসম্ভব। কিন্তু তা বলে গবেষণা আর কল্পনা করা থেকে একদিনের জন্যও নিজেদের বিরত রাখেননি মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। মহাকাশ বিজ্ঞানিদের জনপ্রিয় মতবাদ অনুসারে কৃষ্ণ গহ্বর দ্বারা উদরীকৃত যাবতীয় বস্তু ব্ল্যাক হোলের গর্ভের একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টে উপস্থিত হয়। সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টে পৌঁছনোর পর সেইসব বস্তুর আয়তন যারপরনাই ক্ষুদ্র হয়ে যাবার সাথে সাথে প্রভূত পরিমাণে ভর অর্জন করে আর সেই সাথে তাদের ঘনত্ব আর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অনন্ত আর অসীম হয়ে যায়। মহাকাশ বিজ্ঞানিদের মতবাদ বা কল্পনা অনুসারে কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতরে অবস্থিত এই অঞ্চলে কাজ করে না পৃথিবীর কোন সাধারণ পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম। এমনকি কাজ করে না এলবার্ট আইনস্টাইনের থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি মতবাদও।

আরো পড়ুন-  ব্ল্যাক হোলের অজানা রহস্য – প্রথম পর্ব

সিঙ্গুলারিটি পয়েন্ট বোঝানোর জন্য মহাকাশ বিজ্ঞানিরা থিয়োরি অফ গ্রাভিটির সাথে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সাহায্য নিয়ে কোয়ান্টাম গ্রাভিটি নামধারী এক নতুন মতবাদ (Theory) বা কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে মহাকাশ বিজ্ঞানিদের নিকটে এই কোয়ান্টাম গ্রাভিটি মতবাদ একেবারে নব্য পর্যায়ে রয়েছে। আইনস্টাইন ফিল্ড সমীকরণ কোয়ান্টাম গ্রাভিটি মতবাদেরই একটি শাখা। আমার লেখা আগের পোস্ট পড়ে আপনারা জানতে পেরেছেন কিভাবে এলবার্ট আইনস্টাইন আর ন্যাথান রোজেন তাঁদের ফিল্ড সমীকরণের সাহায্যে মহাকাশে অবস্থিত স্পেস আর টাইম অর্থাৎ সময়কে দুমড়ে মুচড়ে এক ব্রহ্মাণ্ড থেকে বহু আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত অন্য একটি ব্রহ্মাণ্ডে অনায়াসে যাবার জন্য মহাজাগতিক সুড়ঙ্গপথ ওয়ার্মহোলের মতবাদ সমীকরণ আবিষ্কার করেছিলেন। যদিও ওয়ার্মহোল মহাকাশ আর পদার্থ বিজ্ঞানীদের কল্পনা বা মতবাদ মাত্র, কিন্তু বিজ্ঞানিদের মতে বাস্তবে ওয়ার্মহোল নির্মাণ করা সম্ভব হলে শুধুমাত্র এক ব্রহ্মাণ্ড থেকে বহু আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত অন্য ব্রহ্মাণ্ডে অনায়াসে পৌঁছনোই নয়, এমনকি প্রয়োজনে টাইম ট্রাভেল করে অতীত বা ভবিষ্যৎকালেও ভ্রমণ করা যাবে। খ্রিষ্টোফার নোলানের ইন্টারস্টেলার চলচ্চিত্রেও দেখানো হয়েছিল ওয়ার্মহোল।

বাস্তবে অনন্ত এই মহাকাশে ওয়ার্মহোলের অস্তিত্বের সন্ধান না মিললেও সন্ধান মিলেছে ব্ল্যাক হোল অর্থাৎ কৃষ্ণ গহ্বরের। পদার্থ আর মহাকাশ বিজ্ঞানিদের মতানুসারে কৃষ্ণ গহ্বরের সিঙ্গুলারিটি পয়েন্ট অনেকটা ওয়ার্মহোলের মতো কাজ করে। অত্যাধিক ভর, অনন্ত ঘনত্ব আর অসীম মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবের ফলে কৃষ্ণ গহ্বরের সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টে অবস্থিত স্পেস-টাইম দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে সৃষ্টি করে এক ওয়ার্মহোলের। এর ফলে সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টকে সেতু হিসেবে ব্যবহার করে হয়তো পৌঁছে যাওয়া যাবে অন্য কোন ব্রহ্মাণ্ডে বা পৃথিবীর কার্বন কপি হিসেবে পরিচিত অন্য কোন parallel অর্থাৎ সামন্তরাল গ্রহে বা টাইম ট্রাভেল করে পৌঁছে যাওয়া যাবে অতীত বা ভবিষ্যৎকালে।

কিন্তু এসবই হচ্ছে পদার্থ আর মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কল্পনা মাত্র। বাস্তবে কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতরে তার কেন্দ্রস্থলে ঠিক কি সংগঠিত হচ্ছে তা জানা হয়তো সম্ভব নয় কোনকালেই। ইন্টারস্টেলার চলচ্চিত্রের প্রযোজক নোলান সাহেবও মহাকাশ বিজ্ঞানীদের এই কল্পনারই সাহায্য নিয়েছেন। বাস্তবে যদি কুপারের মতো কোন জীবিত মহাকাশচারী কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে যাত্রা শুরু করতেন তাহলে যারপরনাই করুন দশার সম্মুখীন হতে হতো তাঁকে।

কি হতো যদি আপনি পাড়ি জমাতেন কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে ?
=========================================
খ্রিষ্টোফার নোলানের ইন্টারস্টেলার ছায়াছবি দেখার পর এখন হয়তো অনেকেরই মনের মধ্যে এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহলে আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই ঠিক কোন কোন অবস্থার মুখোমুখি হতেন যদি আপনি বাস্তব জগতে কুপারের মতো আপনার মহাকাশযান সমেত স্লিং শট করে কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে ধাবিত হতেন।

আমরা জানি সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির থেকেও প্রায় ২৮ গুণ বেশি। অর্থাৎ কখনও কোন মানুষ যদি সূর্য পৃষ্ঠে অবতরণ করতে সফল হন তাহলে তাঁর ওজন ২৮ গুণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সেই মহাকাশচারী মানুষের পক্ষে সূর্যপৃষ্ঠে চলাফেরা করাই দায় হয়ে উঠবে। মহাকাশ বিজ্ঞানিদের মতে মহাকাশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণ গহ্বর হচ্ছে মধ্যবর্তী আকারের Stellar black hole প্রজাতির। এই Stellar black hole এর ব্যাসার্ধ আমাদের সূর্যের ব্যাসার্ধের চেয়েও কুড়িগুণ বেশি। অর্থাৎ প্রায় চারটে সূর্যকে সঙ্কুচিত করে তাদের যাবতীয় পদার্থ সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টে নিয়ে আসতে পারলে তবেই নির্মাণ করা সম্ভব একটি Stellar black hole এর। এর থেকেই অনুমান করা যায় এইসব কৃষ্ণ গহ্বরের অসম্ভব মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা। এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব এতটাই বেশি যে আলোর পক্ষেও তাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। ঠিক এই কারনেই কৃষ্ণ গহ্বরের Event Horizon Point থেকে আমাদের মানব জগতের প্রচলিত পদার্থ আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিয়ম কানুন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তার পরিবর্তে শুরু হয় কৃষ্ণ গহ্বরের নিজস্ব নিয়ম কানুন।

মহাকাশ বিজ্ঞানিদের মতে প্রত্যেক কৃষ্ণ গহ্বরের নিকটে রয়েছে Event Horizon বা Point of No Return নামে একটি অঞ্চল। এই ইভেন্ট হরাইজন অঞ্চলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব এতটাই সাংঘাতিক যে আলোকেও মুহূর্তের মধ্যে নিজের উদরে শুষে নেয় কৃষ্ণ গহ্বর। আপনি যদি একবার এসে পড়েন এই Event Horizon অঞ্চলে তাহলে আর কখনোই ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না আপনার পক্ষে। কারণ Event Horizon থেকে প্রত্যাবর্তন করতে চাইলে আপনার Escape Velocityর গতিবেগ আলোর গতিবেগের থেকেও বেশি হতে হবে আর আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বৈজ্ঞানিকরা আলোর চেয়েও দ্রুতগতি সম্পন্ন কোন মহাকাশযান নির্মাণ করতে সফল হননি। এই ইভেন্ট হোরাইজন পয়েন্টের পর থেকে স্থান বা স্পেস বদলে হয়ে যায় সময় বা টাইম আর সময় বদলে হয়ে যায় স্পেস। অর্থাৎ আপনি ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হোরাইজন পয়েন্ট অতিক্রম করে সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টের দিকে যত এগিয়ে যেতে থাকবেন ততই স্থানের বদলে আপনি টাইম ট্রাভেল করতে থাকবেন। হয়তো আপনি সময় ভ্রমন করে পৌঁছে যাবেন আপনার সুখ স্মৃতিময় অতীতের শৈশবের দিনগুলিতে বা আরও প্রাচীনকালে গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়কালে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আলোর অভাবে আপনি দেখতে পারবেন না আপনার টাইম ট্রাভেলের দৃশ্য।

Event Horizon বা Point of No Returnএ উপস্থিত হলে আপনি দেখতে পাবেন আপনার সম্মুখে কিছুটা দূরবর্তী স্থানে মহাকাশ কেমন যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আর এক অতিকায় কালো গহ্বর যেন রাক্ষসের ন্যায় হাঁ করে গিলতে আসছে আপনাকে। এটাই হচ্ছে কৃষ্ণ গহ্বরের প্রবেশ মুখ। এরপর আপনি যত এগিয়ে যাবেন কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে ততই প্রবল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকবে আপনার গতিবেগ। আপনার দুই পদযুগল যদি নিচের দিকে অবস্থিত থাকে তাহলে প্রবল মাধ্যাকর্ষণ প্রভাবে প্রথমে আপনার দুই পদযুগল প্রসারিত হতে থাকবে আর তারপর আপনার শরীরের বাকি অংশও দীর্ঘায়িত হতে থাকবে। যদি কৃষ্ণ গহ্বরটি Stellar black hole প্রজাতির হয় তাহলে সেটির ব্যাসার্ধ ৯ মাইল পর্যন্ত হবে এবং আপনি ২০টি সূর্যের সমান মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মুখোমুখি হবেন। এর ফলে ইভেন্ট হরাইজন বা পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে উপস্থিত হবার আগেই আপনার সমস্ত শরীরের সমস্ত অনু-পরমানু প্রলম্বিত হতে হতে শেষে দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে মৃত্যু ঘটবে আপনার। বিজ্ঞানের ভাষায় এধরনের প্রলম্বনকে Spaghettification বলে অভিহিত করা হয়।

যদি কৃষ্ণ গহ্বরটি সুপার ম্যাসিভ প্রজাতির হয় তাহলে সেটির আকার সূর্যের চেয়ে কয়েক মিলিয়ন ভারি হবে। সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো জীবিত অবস্থায় ইভেন্ট হরাইজন এলাকা পর্যন্ত পৌঁছতে সফল হবেন। কিন্তু ইভেন্ট হরাইজন পয়েন্ট অতিক্রম করে আপনি যত কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকবেন ততই আপনার শরীরের উপর ভয়ানক প্রভাব পড়তে শুরু হবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির। যদি আপনি জীবিত অবস্থায় সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টে উপস্থিত হতে সফল হন তাহলে হয়তো সাথে সাথে আপনার শরীরের ঘনত্ব অনন্ত আর অসীম হয়ে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টে আটকে পড়ে আপনি নিজেও রূপান্তরিত হয়ে যাবেন এক কৃষ্ণ গহ্বরে। অর্থাৎ শুধু আপনার নশ্বর শরীরই নয়, যদি আত্মার অস্তিত্ব থেকে থাকে তাহলে আপনার আত্মাও চিরতরে আটকা পড়বে কৃষ্ণ গহ্বরের ফাঁদে। সেক্ষেত্রে বাস্তবে খ্রিষ্টোফার নোলানের ইন্টারস্টেলার ছায়াছবির মহাকাশচারী কুপারের মতো কোনমতেই আর কোন অবস্থাতেই কৃষ্ণ গহ্বর ভেতর থেকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় (যদি আত্মার অস্তিত্ব থেকে থাকে) বেরিয়ে আসতে সফল হবেন না আপনি। আবার কৃষ্ণ গহ্বরের অপরপ্রান্তে যদি অস্তিত্ব থাকে শ্বেত গহ্বর বা হোয়াইট হোলের তবে আপনি হয়তো সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টের ভেতর দিয়ে সেই শ্বেত গহ্বরের সাহায্যে পৌঁছে যাবেন সম্পূর্ণ নতুন কোন সামন্তরাল ব্রহ্মাণ্ডে বা উচ্চতর কোন ডাইমেনশনে বা অতীত অথবা ভবিষ্যতের অন্য কোন টাইমলাইনে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বর আবিষ্কার করতে সফল হলেও শ্বেতগহ্বরের অস্তিত্ব আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। হোয়াইট হোল আজ পর্যন্ত হাইপথিসিস হিসেবেই রয়ে গিয়েছে।

আপনি যখন কুপারের মতো দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে থাকবেন ব্ল্যাক হোল নামক মৃত্যুফাঁদের দিকে তখন ডঃ অ্যামিলিয়া ব্র্যান্ডের মতো আপনার কোন সাথি মহাকাশচারী যদি দূর থেকে লক্ষ্য করতে থাকে আপনাকে তাহলে বাস্তবে ঠিক কি দেখতে পাবেন তিনি ? প্রবল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে আপনি যত দ্রুতবেগে এগিয়ে যেতে থাকবেন কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে আপনার সাথির চোখে ততই মন্থর থেকে মন্থরতম হতে থাকবেন আপনার যাত্রা আর সেই সাথে আপনার অবয়বও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকবে। সেই সাথে আপনার সাথির চোখে এক অদ্ভুত রক্তিম আভায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে আপনার অবয়ব। এরপর তাঁর চোখে আপনার অবয়ব কৃষ্ণ গহ্বরের ইভেন্ট হরাইজন পয়েন্টের সামনে এসে একেবারে জমাট বাঁধা এক পাথরের মূর্তিতে পরিণত হবে। সে আর আপনাকে ইভেন্ট হরাইজন পয়েন্ট অতিক্রম করতে দেখতে পাবে না।

কেন এরকম সম্পূর্ণ বিপরীত দৃশ্য দেখতে পাবেন আপনার সাথি ? এর জবাবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন কৃষ্ণ গহ্বরের সম্মুখে স্পেস অর্থাৎ মহাকাশ আর টাইম অর্থাৎ সময়ের ভূমিকা সম্পূর্ণ বিপরীত মুখী হয়ে যায়। ইভেন্ট হরাইজন পয়েন্টে সময় একেবারে থমকে যায় কিন্তু স্পেস বা মহাকাশ ক্রমাগত সম্মুখে এগিয়ে যেতে থাকে। এই কারনেই আপনি যত এগিয়ে যেতে থাকবেন কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে ততই আপনার সাথির চোখে মন্থর হতে থাকবে আপনার যাত্রা আর ইভেন্ট হরাইজনে এসে একেবারে জমাট বেঁধে যাবে আপনার অবয়ব। যেহেতু কৃষ্ণ গহ্বরের নিকট থেকে রেহাই মেলে না আলোরও তাই আলোর অভাবের কারনে আপনার সাথির চোখে ক্রমে ফ্যাকাসে হতে থাকবে আপনার অবয়ব।

কৃষ্ণ গহ্বর কি চির অমর নাকি মরণশীল ?
=============================
কৃষ্ণ গহ্বর কি অক্ষয়-অমর নাকি মহাকাশে উপস্থিত অনান্য গ্রহ, নক্ষত্র আর এমনকি ব্রহ্মাণ্ডের মতোই কৃষ্ণ গহ্বরও ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে বিনাশের দিকে ? এই প্রশ্নটা নিয়ে বহুকাল ধরে বিজ্ঞানিদের মধ্যে চলছে নানান তর্ক-বিতর্ক। অনেক মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতানুসারে যখন উদরস্থ করবার মতো আর কোন বস্তু অবশিষ্ট থাকে না কৃষ্ণ গহ্বরের নিকটে তখনই ধীরে ধীরে বিনাশের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে কৃষ্ণ গহ্বর। বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর মতানুসারে কৃষ্ণ গহ্বরের ইভেন্ট হরাইজন পয়েন্ট থেকে সংগঠিত নানাবিধ কোয়ান্টাম প্রভাবের কারনে একটি কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতর থেকে ক্রমাগত থার্মাল ইলেক্ট্রো ম্যাগ্নেটিক রেডিয়েশনের বিকিরণ ঘটতে থাকে। এই বিকিরণ আজ হকিং রেডিয়েশন নামে সুপরিচিত। ব্ল্যাক হোলের দ্বারা নির্গত হকিং রেডিয়েশন বিকিরণকে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল ইভাপোরেশন অর্থাৎ কৃষ্ণ গহ্বর বাষ্পীভবন পক্রিয়া নামে উল্লেখ করেছেন। এই বাষ্পকরণের ফলে কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতরে অবস্থিত যাবতীয় ভর আর তেজ ধীরে ধীরে নিঃশেষিত হয়ে আসতে থাকে। এর ফলে একটি কৃষ্ণ গহ্বরের নিকটে গিলবার মতো আর কোন বস্তু বা গ্রহাণু যখন অবশিষ্ট থাকে না তখন হকিং রেডিয়েশনের কারনে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে কৃষ্ণ গহ্বর।

আমাদের সূর্য কি কখনও কৃষ্ণ গহ্বরে রূপান্তরিত হতে পারে ?
=====================================
জানি এই অন্তিম পর্যায়ে উপস্থিত হয়ে এই প্রশ্নটাই হয়তো এখন আপনাদের মনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। তাহলে নিশ্চিত হন এই জেনে যে আমাদের সূর্যের পক্ষে একটি কৃষ্ণ গহ্বরে পরিণত হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যপার। কৃষ্ণ গহ্বরে রূপান্তরিত হবার জন্য যে বিপুল পরিমাণ ভরের প্রয়োজন সৌভাগ্যবশত সেই ভর নেই আমাদের সূর্যের নিকটে। আজ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পর সূর্য যখন তার যাবতীয় তেজ আর ভর হারিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে ধ্বংসের দিকে তখন প্রথমে সেটি পরিণত হবে একটি Red Giant নক্ষত্রে। এরপর যখন সূর্যের সমস্ত জ্বালানি নিঃশেষিত হয়ে আসবে তখন সেটি পরিণত হবে Planetary Nebula তে। এরপর ধীরে ধীরে শীতল হয়ে মৃত নক্ষত্র সূর্য রূপান্তরিত হবে White Dwarf নক্ষত্রে। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বরে কখনই পরিণত হবে না সূর্য। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বরে পরিণত হোক বা না হোক, সূর্যের আলো নিঃশেষিত হয়ে এলে তার সাথে সাথে পৃথিবীর মাটি থেকে লুপ্ত হয়ে যাবে সমস্ত প্রানের চিহ্নও।

নিচের ছবিতে দেখছেন সূর্যের ভরের থেকে ১.৫ বিলিয়ন অধিক ভরযুক্ত কৃষ্ণ গহ্বর Poniua’ena। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতানুসারে এই Poniua’ena কৃষ্ণ গহ্বরের চারপাশে অবস্থিত কুয়াসার হলো এখনও পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকদের দ্বারা আবিষ্কৃত প্রাচীন ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বৃহৎ আকারের কুয়াসার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

নরখাদকের সাথে ইউরোপ মহাদেশের সম্পর্কনরখাদকের সাথে ইউরোপ মহাদেশের সম্পর্ক

নরখাদক শব্দটা শুনলে আমার মস্তিষ্ক হয়তো চিন্তা করতে থাকে আফ্রিকা মহাদেশের কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের কথা। কিংবা কাপালিক বা অঘোরপন্থীদের কথাও,পিশাচ সাধকদেরও অপঘাতে নিহত ব্যক্তির লাশ লাগে বলে শোনা যায়। কিন্তু

বই নিয়ে কিছু মজার তথ্য জেনে নিনবই নিয়ে কিছু মজার তথ্য জেনে নিন

আসুন বই নিয়ে কিছু মজার তথ্য জেনে নেই ————————————————————— ১.হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে ৪ খানা বই আছে যা মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা। ২.মাথা পিছু বই পাঠের দিকে শীর্ষে হলো আইসল্যান্ড।

ধর্মঠাকুর কে?ধর্মঠাকুর কে?

রানা চক্রবর্তীঃ পশ্চিমবঙ্গে ধর্মদেবতার পূজা এখন একান্তভাবে বর্ধমান বিভাগে সীমাবদ্ধ। তবে চব্বিশ পরগণা জেলায় ও কলকাতার কাছাকাছি অঞ্চলে, ধর্মদেবতার বিগ্রহ ও নিত্যপূজা এখনও একেবারে লুপ্ত হয়ে যায় নি। পূর্ববঙ্গের স্থানে

পৃথিবীর সবথেকে ধনী মন্দির তিরুপতি ভেঙ্কটেশ্বর বালাজি মন্দিরপৃথিবীর সবথেকে ধনী মন্দির তিরুপতি ভেঙ্কটেশ্বর বালাজি মন্দির

তিরুপতি: হায়দ্রাবাদ থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দূরে হিন্দুতীর্থ তিরুপতির অবস্থান অন্ধ্রপ্রদেশের দক্ষিণপ্রান্তে। পূর্বঘাট পর্বতমালার সাতপাহাড়ের পাদদেশে তিরুপতি শহর। প্রচলিত লোককথা, এই সাতপাহাড় বিষ্ণুর শয্যা শেষনাগের সাতটি ফণা। মন্দিরশহর তিরুমালার অবস্থান একটি