পৃথিবীর সবথেকে ধনী মন্দির তিরুপতি ভেঙ্কটেশ্বর বালাজি মন্দির - Ei Bangla
Ei Bangla Uncategorized,ব্লগ পৃথিবীর সবথেকে ধনী মন্দির তিরুপতি ভেঙ্কটেশ্বর বালাজি মন্দির

পৃথিবীর সবথেকে ধনী মন্দির তিরুপতি ভেঙ্কটেশ্বর বালাজি মন্দির


তিরুপতি: হায়দ্রাবাদ থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দূরে হিন্দুতীর্থ তিরুপতির অবস্থান অন্ধ্রপ্রদেশের দক্ষিণপ্রান্তে। পূর্বঘাট পর্বতমালার সাতপাহাড়ের পাদদেশে তিরুপতি শহর। প্রচলিত লোককথা, এই সাতপাহাড় বিষ্ণুর শয্যা শেষনাগের সাতটি ফণা। মন্দিরশহর তিরুমালার অবস্থান একটি পাহাড়ের চূড়োয়। সোনার পাতে মোড়া এই মন্দিরটিই পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মন্দির।

তিরু শব্দের অর্থ লক্ষ্মী। লক্ষ্মীর পতি অর্থাৎ ভেঙ্কটেশ্বর স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু। একশো কিলোগ্রাম সোনায় মোড়া গর্ভগৃহে পদ্মের উপর দাঁড়িয়ে আছে চতুর্ভুজ দেবতা, নানা আবরণ ও রত্নখচিত মুকুট পরা। দেবতার চোখদুটি ঢাকা। মন্দিরে আছে দেবতার দুই স্ত্রী-শ্রীদেবী ও ভূদেবী। প্রচলিত লোককথা, দেবতা ভেঙ্কটেশ্বর বিয়ের সময় কুবেরের কাছে অর্থ ধার করেছিলেন। ভক্তেরা আজও সেই ধার শোধ করছেন। পুজো দেওয়ার নানা পদ্ধতি আছে। অন্নপ্রসাদও মেলে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে। প্রসাদ কিনতেও পাওয়া যায়।

তিরুপতি মন্দির

মন্দির থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে পাপবিনাশম তীর্থ। পৃথিবীর এখন সবচেয়ে ঐশ্বর্যশালী এবং ধনী মন্দির হলো ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের ভগবান ভেঙ্কটেশ্বর বালাজির মন্দির। এই মন্দিরে ২০১১ সালে আয় হয়েছে ১ হাজার ৭শ কোটি রুপি। এই টাকার মধ্যে ১ হাজার ১শ কোটি রুপি আয় হয়েছে ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া নগদ অর্থ এবং ব্যাংকে গচ্ছিত থাকা মন্দিরের ধনরত্ন ও অর্থের বার্ষিক সুদ থেকে। আর ২শ কোটি আয় হয়েছে মন্দির দর্শনের জন্য ভক্তদের কাছে প্রবেশপত্র বিক্রি করে। বাকি অর্থ আয় হয়েছে ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া মণিমুক্তো, স্বর্ণ ও রৌপ্যালঙ্কার এবং মন্দিরের প্রসাদ বিক্রিসহ অন্য খাত থেকে। মন্দিরের জন্য গঠিত তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থান ট্রাস্ট এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।

ট্রাস্ট আরো বলেছে, গতবছর মন্দির দর্শন করেছেন ২ কোটি ২০ লাখ ভক্ত। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের রাষ্টপতি প্রতিভা দেবী সিং পাতিল, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মহীন্দ্র রাজাপাকসে, নেপালের প্রথম রাষ্টপতি রামবরণ যাদব, ভারতের পররাষ্টমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণ সহ দেশ-বিদেশের বিশিষ্টজনেরা।

প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার ভক্তর আগমন ঘটে তিরুমালা তিরুপতি মন্দিরে। ছুটির দিনগুলোতে এই সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে এসে চুল কাটালে পুণ্য হয়। তাদের কাটা চুলগুলো ফেলে দেওয়া হয় না। সেগুলো প্রথমে শুকিয়ে নেওয়া হয় এবং পরে বিক্রি করা হয় উইগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের এই মন্দিরের কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ৬৫ হাজার কেজি নানা ধরনের কাটা চুল নিলামে তুলেছে। চুল কেনার জন্য এই নিলামে অংশ নিয়েছে ৪৯টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাদের কাছে চুল বিক্রি করে তিরুমালা তিরুপতি মন্দির আয় করেছে ১৩৩ কোটি রুপি! ২০০৫-০৬ বছরে এ মন্দিরে পুণ্যার্থীর সংখ্যা ছিল এক কোটি ৯৮ লাখ। ২০১০-১১ বছরে সেটা বেড়ে হয়েছে দুই কোটি ৩২ লাখ। আর আয় এক হাজার ৫০০ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৯০০ কোটি রুপি।ওই মন্দিরের দেবতাকে তুষ্ট করতে কর্ণাটকের পর্যটনমন্ত্রী জনার্দন রেড্ডি তাঁর চরণে দান করলেন ৪৫ কোটি রুপি মূল্যের স্বর্ণ-হীরা-মণিমুক্তায় খচিত একটি মুকুট।

আরো পড়ুন- ১০ টন সোনা সহ ১৫ হাজার কোটির বেশি নগদ! তিরুপতি মন্দিরে দানের হিসাব জেনে চোখ কপালে উঠব

মন্ত্রী বলেছেন, ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের আশীর্বাদে তিনি একটি ইস্পাতশিল্প গড়ে তুলেছেন। ওই শিল্পে কাজ করছেন ২০ হাজার কর্মী। তাঁর এবং কর্মীদের মঙ্গলের জন্য তিনি দান করলেন এই মুকুট। এই মুকুটটি তৈরি করতে সময় লেগেছে নয় মাস।

এখন পর্যন্ত তিরুপতি মন্দিরে ভক্তরা যে দেবতার চরণে স্বর্ণালংকার দান করেছেন তার মূল্য গিয়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার কোটি রুপি। এখন মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে ১১ টন সোনা। কিছুদিন আগেও অস্ট্রেলিয়ার এক নারী শিল্পপতি ওই মন্দিরে ২০০ কোটি রুপির একটি চেক পাঠিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

পতনোন্মুখ হোসেনশাহী ও শের খাঁর উত্থানপতনোন্মুখ হোসেনশাহী ও শের খাঁর উত্থান

রানা চক্রবর্তীঃ হোসেন শাহের মৃত্যুর পরে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ‘নসরৎ শাহ’ হোসেনশাহী মসনদে আরোহণ করেছিলেন। তবে প্রথানুযায়ী তাঁকে যে তাঁর ১৭ জন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মসনদের অধিকার নিয়ে যুদ্ধ করতে হয়

সামুদ্রিক সাম্রাজ্যে ভারতবর্ষ চোল নৌ-বাহিনিসামুদ্রিক সাম্রাজ্যে ভারতবর্ষ চোল নৌ-বাহিনি

ভারতে নৌ শক্তির গুরুত্ব প্রথম উপলব্ধি করেছিল মৌর্যরা , তাঁদের একটি ছোটোখাটো নৌ-বাহিনিও ছিল । কিন্তু নৌ অভিযানের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবিস্তারের পথপ্রদর্শক ছিলেন চোল সাম্রাজ্যের দুই নৃপতি — প্রথম রাজরাজ চোল

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের প্রান দিতে পর্যন্ত পিছপা হননি! কে ছিলেন আমস্টারডামবাসী এই আব্রাহাম?বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের প্রান দিতে পর্যন্ত পিছপা হননি! কে ছিলেন আমস্টারডামবাসী এই আব্রাহাম?

নিজের দেশের জন্য লড়েছে এমন বহু বীরদের কথা উল্লেখিত রয়েছে ইতিহাসে। কিন্তু একজন অন্য দেশের নাগরিক হয়েও সম্পূর্ণ ভিন্ন দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না।

চিনা দূতাবাস থেকে কোটি কোটি টাকা অনুদান নিয়েছে কংগ্রেস, পাল্টা আক্রমন অমিত শাহেরচিনা দূতাবাস থেকে কোটি কোটি টাকা অনুদান নিয়েছে কংগ্রেস, পাল্টা আক্রমন অমিত শাহের

৯ ডিসেম্বর অরুনাচল প্রদেশেন তাওয়াং সেক্টরে ভারত-চিন সেনা সংঘাত নিয়ে সরগরম সংসদ। সরকারের বক্তব্যের দাবিতে বিরোধীদের হাঙ্গামার জেরে মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন। এই প্রেক্ষিতে কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয়