‘রণজিৎ সিং ও বিবি মোরান’ (ঐতিহাসিক প্রেম ১) - Ei Bangla
Ei Bangla ব্লগ ‘রণজিৎ সিং ও বিবি মোরান’ (ঐতিহাসিক প্রেম ১)

‘রণজিৎ সিং ও বিবি মোরান’ (ঐতিহাসিক প্রেম ১)


রানা চক্রবর্তীঃ একটু মনোযোগ সহকারে ইতিহাস পড়েছেন, তাঁরাই হয়ত লক্ষ্য করেছেন যে, বহু পাষণ্ড হৃদয়, নিষ্ঠুর শাসকেরা নিজেদের মাথা উঁচু করে দেশ শাসন করে গেলেও প্রজারা তাঁদের দিকে আঙুল না তুলে সর্বদা কোন আদর্শ শাসককে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। সেই কারণে, রামচন্দ্রের নিন্দে মন্দ শোনা গেলেও, দুর্যোধনের কিন্তু কদাপি তেমন কোন নিন্দে মন্দ শুনতে পাওয়া যায় না (দ্রৌপদী পর্ব বাদে)। পাঞ্জাবকেশরী ‘রণজিৎ সিং’কেই এর প্রকৃষ্ট ঐতিহাসিক উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। পাছে অহঙ্কার হয় বলে যিনি কখনও নিজের মাথায় মুকুট পরে সিংহাসনে বসতেন না; সেই ধর্মপ্রাণ, ন্যায়বিচারক রাজার দিকেও তাঁর প্রজারা আঙুল তুলেছিলেন। তাঁদের গুরুতর অভিযোগ ছিল যে, পাঞ্জাবকেশরী একজন তুচ্ছ নর্তকীকে ভালোবেসেছেন। ইতিহাসে ‘মোরান কোমের’ নাম থাকলেও তিনি আজও লোকশ্রুতিতে বেঁচে রয়েছেন। অবশ্য সেই ঐতিহাসিক ঘটনার আরো একটি সাক্ষী এখনো পর্যন্ত টিকে রয়েছে, সেটি হল অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির সংলগ্ন বিশাল তেঁতুলগাছটি। ওই গাছটি আজও রণজিৎ সিংহের প্রেমিক হৃদয়ের কথা নিজের অস্তিত্বের মধ্যে মিশিয়ে রেখেছে।
রণজিৎ সিং নিতান্ত বালক বয়সে রাজা হয়েছিলেন। তাঁর ছোট্ট রাজ্যটির নাম ছিল ‘সুকারচুরিয়া মিল’। সেখান থেকে নিজের জীবন শুরু করে তিনি এক ঐক্যবদ্ধ জাতির একমাত্র নেতা হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। বিদেশিদের কেউ তাঁকে বলেছিলেন ভারতের নেপোলিয়ন, কেউ আবার বলেছিলেন একজন আদর্শ রাজা। তবে তাঁর শুধু অত্যধিক আসক্তি ছিল সুন্দরী নর্তকীদের প্রতি। সমসাময়িক রীতি অনুযায়ী তাঁর হারেমে অনেক নারী ছিলেন। তাঁর এক পুত্র ‘দলীপ সিং’ একদা ফরাসি একটি সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ে জানিয়েছিলেন, “আমি আমার পিতার ছেচল্লিশজন স্ত্রীর একজনের সন্তান।” ইতিহাসে অবশ্য রণজিতের অত বেশি ‘চাদর আন্দাজি’ বা বৈধ বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায় না, তবে তাঁর হারেম বা জেনানা রূপসীদের ভিড়ে ভরে উঠেছিল, সে বিষয়ে ঐতিহাসিক তথ্য অবশ্যই পাওয়া যায়। সুশাসক রাজার সেই বিলাসিতাটুকু তাঁর প্রজারা ক্ষমার চোখেই দেখতেন। তাই হয়ত তাঁরা কোনদিনই তাঁর বিরুদ্ধে সে বিষয়ে কোন অভিযোগ জানান নি, যতক্ষণ পর্যন্ত না পঞ্জাবকেশরী মোরানের প্রেমে পড়েছিলেন। ইতিহাস বলে যে, রণজিৎ সিংহ রাজা হয়েছিলেন বারো বছর বয়সে, আর ষোল বছর বয়সে তাঁর বিবাহ হয়েছিল ‘মহতাব কাউর’ ও ‘রাজ কাউরের’ সঙ্গে। রাজ কাউরই ১৮০২ সালে ‘কুমার খড়ক সিং’কে জন্ম দিয়েছিলেন। এর ঠিক তিন বছর পরে কিমল সিংয়ের কন্যা ‘চাঁদ কাউরের’ সঙ্গে শিশু খড়কের বিবাহ ঠিক হয়েছিল। বিরাট ধুমধাম হয়েছিল সেই ‘সাগাই’ বা পাকা দেখা উপলক্ষে। আর সেই উৎসবের সময়েই একটা নাচের দলের সঙ্গে অতি সামান্যা নর্তকীদের একজন হয়ে ‘মোরান কোম’ নাচতে এসেছিলেন। তখনও রণজিৎ তাঁর নাম পর্যন্ত জানতেন না। তিনি শুনেছিলেন যে, নাচের দলের সঙ্গে একটি খুবসুরৎ নর্তকী এসেছে, যে ময়ূরের মতো নাচ করে। সেকথা শুনে তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘তাই নাকি? তাহলে তো তাঁর নাচ দেখতেই হয়।’ … ‘দেখার মতোই নাচে মেয়েটি। যাঁরা দেখেছে তাঁরাই বলেছে।’ … ‘আমি বলিনি।’ রণজিৎ বয়স্যদের বলেছিলেন, ‘কারণ আমি দেখিনি। তা মেয়েটি কি কুটুমবাড়ির নাচের দলের সঙ্গে এসেছে? এখানকার সব মেয়ের নাচই তো আমি দেখেছি। ময়ূরীনৃত্যের কথা তো শুনিনি।’ … ‘পাঞ্জাবেরই মেয়ে। একটা নাচের দলে আছে।’ রাজা যাঁর নাচ দেখতে চেয়েছেন তাঁকে খুঁজে বের করা শক্ত হয়নি। দেখা গেল বিয়ের দলের একটা ঝাঁকিতে উদ্দাম ময়ূরী নৃত্য। অনিন্দ্যসুন্দরী একটি তরুণী নাচছে। যতক্ষণ নাচ চলল, ততক্ষণ রণজিৎ সিংয়ের চোখের পলক পড়ল না। অমন বন্য ময়ূরীর মতো এমন মেয়ে সত্যিই এর আগে কখনো তাঁর চোখে পড়েনি। তিনি বলেছিলেন, ‘ওই মেয়েটির নাচ আবার দেখতে চাই।’ সেকথা শুনে খিলখিল করে কাঁচভাঙা হাসি ছড়িয়ে দিয়ে মোরান বলে উঠেছিলেন, ‘নাচ দেখাবো কিন্তু মহারাজা যদি খুশি হন তাহলে কি আমার প্রশ্নের জবাব পাব?’ … ‘নিশ্চয় পাবে।’ মুগ্ধ হয়ে রণজিৎ উত্তর দিয়েছিলেন, মেয়েটিকে তাঁর ভালো লাগতে শুরু করেছিল। সেটা একটা অন্য রকমের ভালোলাগা। নেশার মতো সেটা তাঁর শরীরের শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এরপরে মোরান নেচে গিয়েছিলেন উন্মত্তের মতো, অবিশ্রান্ত চরণপাতে মনে হচ্ছিল বুঝি ঘন মেঘ দেখে ময়ূর নিজের পেখম তুলে নাচছে; একটা-দুটো নয়, অজস্র ময়ূর; অমন নাচতে জানতেন বলেই তাঁর নাম রাখা হয়েছিল ‘মোহরান’, তা থেকে ‘মোরান’। তিনি কোথায় অমন নাচ শিখেছিলেন, কাদের ঘর থেকে এসেছিলেন, সেসব আজও কেউ জানেন না। হয়ত বাঁদিবাজার থেকে কিনে নিয়ে এসে কেউ তাঁকে তৈরি করেছিলেন। তারপরে ফুলের সুরভির মতো তিনি যখন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিলেন, তখনই রাজপুত্রের পাকাদেখার উৎসবে তাঁর নাচবার সুযোগ এসেছিল। তারই জের টেনে সেদিন তিনি স্বয়ং রাজার সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। ‘শাবাশ’ – বলে উঠলেন রণজিৎ, ‘এমন নাচ কখনও দেখিনি। তোমার নাম কি?’ মোরান আবার হেসে উঠেছিলেন, মাতাল করা হাসি। সেটা জেনানাহারেমের মাপা হাসি ছিল না, তাঁর হাসিতে যেন বন্যগোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই মুহূর্তে রণজিতের মনে হয়েছিল, ওই মেয়েটির জন্যই তিনি যেন সারাজীবন অপেক্ষা করে ছিলেন। মেয়েটিকে তাঁর চাই, আর সেটা যে কোন মূল্যে। মোরান নিজের কণ্ঠে সুরের জলতরঙ্গ ছড়িয়ে তাঁকে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমার নাম মোহরান, সবাই তাই বলে।’ … ‘তোমার আপনজন কেউ নেই।’ যেন ভারি মজার কথা শুনেছেন এমন ভাব করে মোরান হেসে গড়িয়ে পড়ে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমার তো সবাই আপনজন।’ তারপরে আশ্চর্য ভ্রূভঙ্গি করে বলেছিলেন, ‘যে আপন করে নেয় আমি তাঁরই।’ সে কথা রণজিৎ নিজেও জানতেন। পথে পথে নর্তকীর জীবন ওভাবেই গড়িয়ে চলত, কিন্তু তিনি মোরানের অকপট ভাষণের জন্য মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বলেছিলেন, ‘নাচ দেখাবার আগে কি যেন প্রশ্ন ছিল তোমার?’ আবার একচোট হাসি, ‘যদি অভয় দেন তো বলি।’ … ‘বেশ তো এতক্ষণ নির্ভয়ে কথা বলছিলে এখন আবার ভয়ের কথা কেন?’ … ‘কারণ আছে বলেই বলছি। কুটুমবাড়িতে নাচ দেখাতে এসে কত রকম মানুষ দেখলাম, কিন্তু আপনার মতো একজনকেও দেখলাম না।’ রণজিৎ শুনে চুপ করে তাকিয়ে ছিলেন। মোরান কিন্তু থামলেন না, ঝরনা একবার নামতে শুরু করলে আর নিজের বেগ সামলাতে পারে কি? মোরানও পারলেন না। আসলে কি যে তিনি জিজ্ঞেস করতে চান তা তখন তাঁর মনেই ছিল না, তিনি শুধু কথার কথা বলেছিলেন, সেটা পথনায়িকার দৃষ্টি আকর্ষণ করবার একটা ছল মাত্র ছিল। ‘মহারাজ, আমি জিজ্ঞেস করছিলাম, ঈশ্বর যখন সবাইকে রূপ বিলি করছিলেন তখন আপনি কোথায় ছিলেন?’ কুৎসিত দর্শন রণজিৎকে মুখের ওপর ও কথা বলবার স্পর্ধা যে কারো থাকতে পারে তা তখনও পর্যন্ত তিনিও জানতেন না। রণজিৎ কিন্তু একেবারেই চটলেন না। তিনি হাসি মুখে বলেছিলেন, ‘আমি তখন চেষ্টা করছিলাম বাহুবলে রাজ্য জয় করবার কপাল হাসিল করতে।’ মোরান লজ্জায় মাথা নত করেছিলেন। সেটাই ছিল রণজিতের কাছে তাঁর প্রথম পরাজয়। সেই প্রথম রূপের আড়ালে রাজার সুরসিক ও বুদ্ধিমান মনটিকে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন। তিনিও তীব্র এক আকর্ষণ বোধ করেছিলেন। আর মোরানের সেই দুঃসাহসও রণজিতের ভালো লেগেছিল। তিনি তাঁকে বলেছিলেন, ‘আবার দেখব তোমার নাচ। না বলে পালিয়ে যেও না যেন আমার রাজ্য থেকে।’ … ‘পালাবো কেন?’ মিষ্টি হাসিতে উদ্ভাসিত হন মোরান, ‘আপনার পিঁজরায় তো পাখি নিজেই এসে ঢুকেছে।’ রণজিৎ হেসে বলেছিলেন, ‘মনে থাকবে তোমার কথাটা।’

এরপরে উৎসব কেটে গেলেও রণজিতের মন থেকে উৎসবের রেশ কাটেনি। তাঁর রূপ না থাকলেও রূপসীরা তাঁকে চুম্বকের মতো টানতেন। কিন্তু মোরান যেন অন্য ধাতু দিয়ে গড়া ছিলেন। এক আশ্চর্য টান ছিল তাঁর মধ্যে, তাঁর চোখে, তাঁর মুখে, তাঁর সর্ব অবয়বে। শয়নে স্বপনে রণজিৎ মোরানের ময়ূরী নৃত্যের কথা বাতেন, তাঁর সামনে জেনানামহলের অন্য রূপসী রমণীদেরও রণজিতের পানসে বলে মনে হত। বারবার মোরানকে দেখতে ইচ্ছে করত। মোরানও অমৃতসরে থেকে গিয়েছিলেন। তখন রণজিৎ সিং স্বর্ণমন্দিরকে নতুন করে রূপ দিতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি ধর্মপ্রাণ রাজা ছিলেন। তামার পাতে দশ মণেরও বেশি, এখনকার হিসেবে চারশ কেজি সোনা মিশিয়ে মন্দিরের গম্বুজটি তখন মুড়ে দেওয়ার কাজ চলছিল। মন্দিরের অন্যান্য সংস্কারও তখন চলছিল। আশ্চর্য মানুষটি বিলাসিতায় ডুবে থাকলেও নিজের কর্তব্য কিন্তু কখনও ভোলেন নি। যুদ্ধ ও প্রজাপালন দুই-ই যেন তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। তেমনই নিয়মবাঁধা ছিল তাঁর সারা দিনের কাজকর্ম। সেসবেরই ফাঁকফোকর দিয়ে মোরান যেন তাঁর মনের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলেন। মোরান যেখানে বাসা নিয়েছিলেন, রণজিৎ সেখানে মাঝে মাঝে যেতেন। তাঁকে দেখে মোরান খুশিতে উচ্ছল হয়ে উঠতেন। অবিশ্রাম নাচ আর সুরার নেশায় রণজিতের সময়টা কোথা দিয়ে যে কেটে যেত, তা তিনি নিজেও বুঝতে পারতেন না। ‘মোরান, তোমার মধ্যে জাদু আছে। তোমাকে যখন দেখতে পাই না তখনও আমি তোমার কথা ভাবি।’ … ‘আমি তো দিন রাতের সব সময়েই আপনার কথা ভাবি।’ রণজিৎ জানতেন, ও কথা সব নর্তকীরাই বলেন, বিশেষ করে তাঁদের পৃষ্ঠপোষক যদি কোন রাজা হন, তবুও তিনি মোরানের কথা অবিশ্বাস করতে পারতেন না। তাঁর মনে হত, মোরান তাঁকে সত্যিই ভালোবাসেন, নিজের বুকের মধ্যেও তিনি নতুন অনুভূতি খুঁজে পেতেন। মাঝে মাঝের বদলে এরপরে একটা সময়ে রণজিৎ প্রতিরাতেই মোরানের সান্ধ্য অতিথি হয়ে উঠেছিলেন। এক আশ্চর্য প্রাণের হিল্লোল বয়ে যেত মোরানকে ঘিরে। বাগানে ফুলের সঙ্গে প্রজাপতির ছন্দ মিলিয়ে তিনি ময়ূরের মতোই নেচে উঠতেন। নেচে উঠতেন ফোয়ারার জলের মধ্যে। শুধু ঘরে বসে নয়, মোরান রাজাকে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের মিশিয়ে দিয়ে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। হেসে বলেছিলেন, ‘দুনিয়ার কোন প্রাণী ঘরের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে? আমি সারা জগতের সামনে আপনাকে ভালোবাসতে চাই।’ … ‘সত্যিই তুমি আমাকে ভালোবাসো?’ … ‘সত্যি না তো কি মিথ্যে?’ … ‘আমি কি ভাবছি জানো?’ … ‘না বললে জানবো কি করে?’ … ‘আমি তোমাকে একেবারে নিজের করে পেতে চাই।’ … ‘পেয়েছেনই তো। বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি আমার কথা? বলেছি না পাখি স্বেচ্ছায় আপনার পিঁজরায় এসে ঢুকেছে।’ রণজিৎ হেসে বলেছিলেন, ‘সেটাই পাকাপোক্ত করতে চাই। তোমাকে আমার জেনানায় বন্দি করে রাখব। বিয়ে করে নিয়ে যাব তোমায়। সকলের সামনে।’ হঠাৎ মোরানের সব চঞ্চলতা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল, তিনি অবাক হয়ে রাজার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। নিজের কানে ঠিক শুনছেন তো? মহারাজা বলছেন এ কথা? অনেকক্ষণ পরে এক চিলতে দুর্বোধ্য হাসি ফুটে উঠেছিল মোরানের মুখে। বলেছিলেন, ‘তা তো হতে পারে না মহারাজ।’ ‘কেন?’ রণজিৎ সিং বিস্মিত হয়েছিলেন। ‘আমি যে মুসলমান আর আপনি ধর্মপ্রাণ …’ তাঁর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রণজিৎ সিং বলেছিলেন, ‘শিখ’। তারপরে বলেছিলেন, ‘তাতে কি হল? শিখদের তো মুসলমানকে বিয়ে করতে বাধা নেই।’ সেকথা শুনে মোরানের মুখে আগের রং ফিরে এসেছিল। ধর্মাধর্ম নিয়ে বিবাদে তাঁর বড় ভয় ছিল। ধর্মে তাঁর কোন আসক্তি ছিল। কোন শৈশবে মা-বাবাকে হারিয়েছিলেন, সেকথা তাঁর মনেও ছিল না। পথে পথে যে ঘুরে বেড়ায় তাঁর আবার জাত-ধর্ম! কিন্তু রাজার বেলা তো সেকথা খাটে না। সবাই বলে তিনি ধার্মিক। মোরানের রানী হওয়ার কোন শখ ছিল না। তিনি শুধু রণজিৎকে নিজের কাছে পেতে চেয়েছিলেন, আর সেটাই পেয়েছিলেন। রণজিতের ক’জন তাঁকে ওভাবে নিজেদের কাছে পেয়েছিলেন? তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘আমি জেনানায় গিয়ে ঘোমটা টেনে ঘরবন্দি হতে পারব না। তার চেয়ে এই বেশ আছি। সকাল-সন্ধ্যায় আপনার দেখা পাচ্ছি।’ … ‘সন্ধ্যায় না হয় হল, সকালে তুমি আমার দেখা পেলে কবে?’ … ‘সকালে আপনি যখন ঘোড়া ছুটিয়ে পথে বেরোন, আমি আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখি যে, আপনি কি জানেন, তখন আপনাকে কী সুন্দর দেখায়?’ রণজিৎ হেসে ফেলেছিলেন। সবার সঙ্গে তিনি নিজেও ভালো করে জানতেন যে, তিনি অতি সাধারণ দেখতে। তাঁর রূপহীনতাকে কোন মতেই ক্ষমা করতে পারেননি প্রথম স্ত্রী মহতাব কাউর। এই মোরানই একদিন তাঁর রূপ নিয়ে উপহাস করেছিল জলসায়, সকলের সামনে। বললেন, ‘দারুণ খবর শোনালে তুমি।’ … ‘আমি সত্যি কথাই বলছি। ঘোড়ার পিঠে আপনাকে মানায়।’ রণজিতের মন রাখবার জন্য কথাটা ছিল না, ঘোড়ার প্রতি রণজিতের অত্যধিক আসক্তি ছিল। ঘোড়ার পিঠে চাপলে তাঁর শরীরের যাবতীয় ত্রুটি যেন ঢাকা পড়ে যেত। প্রতিদিন সকালে এক চক্কর ঘোড়ায় চেপে ঘুরে আসা ছিল রণজিতের প্রিয় ব্যায়াম। সেদিন কথাটা চাপা পড়ে গেলেও রণজিৎ সেটা চাপা পড়তে দিলেন না। মোরান তাঁকে পাগল করে দিয়েছেন। প্রতিদিন এই নাচের মেহফিলে একটু একটু করে পাওয়ায় মন ওঠে না তাঁর। আবার বললেন, ‘আমি তোমাকে রানী করে নিয়ে যাব মোরান।’ … ‘কেন মহারাজ?’ … ‘তোমাকে না দেখে থাকতে পারি না যে।’ মোরান হেসে হেসে তাঁকে কুরনিশ করে বলেন, ‘বাঁদির পরম ভাগ্য। কোনদিন রানি হতে পারব সে তো স্বপ্নেও ভাবিনি। আজ স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে তবু আমার ভয় করছে।’ … ‘কিসের ভয় বল তো?’ কৌতূহল প্রকাশ করেন রণজিৎ। ‘লোকে আপনার নিন্দে করবে।’ … ‘পাগল তুমি। প্রজারা আমাকে ভালোবাসে। আমিও তাঁদের সুখদুঃখের খবর রাখি। তাঁরা সুখে আছে।’ রণজিৎ রাজা হলেও মোরানের চেয়ে তাঁর প্রজাদের কমই চিনতেন। একটু একটু করে তাঁদের মনে যে ক্ষোভ জমছিল সে কথা তাঁর জানাই ছিল না। মোরানের প্রতি তাঁর আসক্তি ইতিমধ্যেই প্রজাদের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কোন গুজব বা গুঞ্জনকে কানে তোলার মানুষ তিনি ছিলেন না। যে কাজটা সূর্য ওঠার আগে ভেবে রাখতেন, সেটা তিনি সূর্যাস্তের আগেই শেষ করতেন।

আরো পড়ুন- ‘রামকৃষ্ণ ও বঙ্কিম – একটি বিতর্কিত অধ্যায়’ (প্রথম পর্ব)

এরপরে একদিন রণজিৎ সিংহের জেনানায় পাকাপাকিভাবে আশ্রয় পেয়েছিলেন মোরান। তিনি ছিলেন মহারাজা রণজিৎ সিংহের তৃতীয় রানী, যেহেতু তিনি মুসলমান ছিলেন, তাই তিনি পরিচিত হয়েছিলেন ‘বিবি মোরান’ নামে। বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয়নি কারও কাছে, বিয়ে অবশ্য হয়েছিল সাধারণের চোখের আড়ালে। হয়ত সেজন্যই ইংরেজদের বর্ণনায় মোরান বিবি আজও রণজিতের রক্ষিতা রূপেই পরিচিত। ওই বিবাহের পরে ইংরেজদের পক্ষ থেকে ‘চার্লস মেটকাফে’ রণজিতের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য এসেছিলেন। ১৮০৮ সালে তিনি মহারাণার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁরা আলোচনা করছিলেন চুক্তি সম্পর্কে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। শতদ্রুর পূর্বদিকে রণজিৎ তাঁর রাজ্যবিস্তার করতে পারবেন না, প্রতিদানে কোম্পানি তাঁর এলাকার দিকে হাত বাড়াবে না। উপরন্তু ইংরেজরা বন্ধু হয়ে তাঁর পাশে থাকবে। সেই চুক্তিতে সম্মত হয়েছিলেন রণজিৎ। সেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল অমৃতসরে ১৮০৯ সালে, ১৮৩১ সাল পর্যন্ত সেটির মেয়াদ ছিল। মেটকাফে মহারাজার অমৃতসরে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যস্ততা লক্ষ্য করেছিলেন। রণজিৎ তাঁকে বলছিলেন, ‘আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না। আমাকে ফিরতে হবে।’ … ‘মহারাজের কি জরুরি কোন কাজের কথা মনে পড়ে গেল?’ … ‘কাজ? না কাজ নয়, তার চেয়েও জরুরি। মোরানবিবিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।’ হেসে উত্তর দিয়ে উঠে পড়েছিলেন রণজিৎ। মেটকাফে যা বোঝার বুঝেছিলেন। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে, রণজিৎ সিংহের উদগ্র বাসনা তাঁর প্রিয়তমা সঙ্গিনী মোরানের জন্য দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে। বাস্তবিকই রণজিৎ মোরানকে না দেখে থাকতে পারতেন না। অন্যদিকে, দীর্ঘ অদর্শনের দুঃখ ঘোচাবার জন্যে মোরানও মহারাজার সঙ্গে বেরিয়ে পড়তেন। রণজিতের অন্য রানীদের মতো তিনি পর্দানশিন হতে পারেননি। তখন রানী হলেও, এর আগে তো পথে পথেই তাঁর দিন কেটেছিল। কিন্তু তাঁকে দেখে অনেকের চোখেই অবজ্ঞা ফুটে উঠত। প্রজারা বলতেন, মান-সম্মান আর কিছুই যেন রইল না। পথ থেকে কুড়িয়ে এনে রণজিৎ সামান্যা মেয়েটিকে একেবারে নিজের পাশে বসালেন! তাও আবার হোলির দিনে! পাঞ্জাবে হোলি হল মহোৎসব। সেদিন আড়ম্বরপ্রিয় রণজিৎ উৎসবে মেতে উঠতেন। তিরিশ চল্লিশটি সুন্দরী তরুণী তাঁকে ঘিরে থাকতেন, আবির-গুলালে সকলে সকলকে রাঙিয়ে দিতেন। মোরান কিন্তু হিন্দু না হয়েও তাঁদের সঙ্গে অনায়াসে যোগ দিতে পারতেন। রঙ খেলা ব্যাপারটা তাঁর ভালোই লাগত। সব শেষে মোরান রণজিতের সঙ্গে হাতির পিঠে উঠে বসতেন, আর তাতে রণজিতের মনটা রঙে-রসে আরো ফুরফুরে হয়ে উঠত। কিন্তু নিজের আনন্দের অতিশয্যে তিনি কখনো লক্ষ্য করেন নি যে তাঁর প্রজাদের চোখে খুশির বদলে বিরক্তি ঝিলিক দিতে শুরু করেছে। ধর্মের ব্যাপারে রণজিতের আশ্চর্য উদারতা ছিল। হিন্দু, মুসলমান ও শিখ – তিন ধর্মকেই তিনি নিজের মত করে সম্মান দিতেন। নিজের কোন রানীকেই তাঁর নিজের ধর্ম ত্যাগ করে তিনি কখনো শিখ হতে বলেননি। সেই কারণে মোরানকেও কখনো ধর্মান্তরিত হতে হয়নি। তিনি রাজার সঙ্গে সানন্দে হরিদ্বার গিয়েছিলেন। রণজিৎ যখন মোরানকে তাঁর তীর্থযাত্রার বিষয়ে জানিয়েছিলেন, তখন বিষণ্ণ মোরান তাঁকে শুধু বলেছিলেন, ‘অত দূরে তীর্থ করতে যাবেন আপনি! আমি এখানে বসে থেকে কি করব?’ অম্লান মুখে রণজিৎ তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমি থাকবে কেন? তুমিও যাবে।’ … ‘সেখানে কি করে যাব? সে তো হিন্দুদের তীর্থস্থান। আমাকে ঢুকতে দেবে কেন ?’ … ‘দেবে না কেন? হরিদ্বারে কি অন্যজাতের কেউ যায় না? আমিও তো হিন্দু নই, শিখ। আমাকে ঢুকতে দেবে না?’ … ‘আপনি যে রাজা।’ … ‘আর তুমি হচ্ছ রানী।’ রণজিতের কথার কাছে মোরান হার মেনেছিলেন। রাজা তাঁকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে না দেখলে আমি একটা দিনও যে থাকতে পারি না।’ … ‘আমিই কি পারি?’ … তারপরে রণজিতকে সুখের আবেগে জড়িয়ে ধরে, দু’চোখে মাদকতা মিশিয়ে মোরান বলেছিলেন, ‘লোকে আপনার নিন্দে করবে যে।’ … ‘নিন্দে করুক, প্রশংসা করুক আমার কিছু যায় আসে না।’ অতঃপর মোরানকে সঙ্গে নিয়েই রণজিৎ হরিদ্বারে ঘুরে এসেছিলেন। এরপরে একদিন মোরান তাঁকে বলেছিলেন, ‘পবিত্র কাবা দর্শন করতে যাবেন না মহারাজ?’ রণজিৎ বলেছিলেন, ‘নিশ্চয় যাব।’ এবং রণজিৎ নাকি সত্যিই একবার মক্কায় গিয়েছিলেন, যদিও এবিষয়ে বিশেষ কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি নিজে ধর্মপ্রাণ হলেও একজন শাসক ছিলেন, তাই শাসকের যেমন নিরপেক্ষ থাকা উচিত, তেমন থাকতেই বেশি ভালোবাসতেন। কিন্তু শিখদের ব্যাপারটা ক্রমেই খারাপ লাগতে শুরু করেছিল। মুঘল সম্রাটেরা তাঁদের গুরুদের ওপরে কম অত্যাচার করেননি। একজন শিখ হয়ে রণজিৎ সে কথাটা কিভাবে ভুলে গিয়েছেন – সেটাই তাঁর প্রজাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছিল। তাঁদের মনে শঙ্কা ঝড় উঠেছিল – তবে কি সে সবই ওই মায়াবিনী যবনীর ইঙ্গিতে হচ্ছে? ইতিমধ্যে আরও একটি ঘটনায় তাঁরা আরো শঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন। ইতিমধ্যে রণজিতের নতুন মুদ্রা বের হয়েছিল – সিক্কা। সবাই দেখেছিলেন যে তাতে একটি পেখম তোলা ময়ূরের ছবি রয়েছে। আসলে রণজিৎ মোরানকে একেবারে চমকে দিতে চেয়েছিলেন, তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে নির্দেশ দিয়ে তিনি ওই মুদ্রাটি তৈরী করিয়েছিলেন। বাজারে সেই মুদ্রার নাম হয়েছিল ‘আরশিওয়ালা সিক্কা’। সেদিনও সেই অপূর্ব ময়ূরী নৃত্য করেছিলেন মোরান। তাঁর অপরূপ দেহভঙ্গির প্রতিটি বিভঙ্গে যেন খুশি উপচে পড়েছিল। সেই নাচ শেষ হওয়ার পরে রণজিৎ তাঁকে সেই আরশিওয়ালা সিক্কা উপহার দিয়েছিলেন, তাতে ছিল নৃত্যরত ময়ূর। তারপরে তিনি মোরানকে বলেছিলেন, ‘মোরান, তুমি সকলের সামনে ভালোবাসতে চেয়েছিলে, তাই সবার মধ্যে আমার প্রেমের স্বীকৃতি ছড়িয়ে দিলাম। আমার মোরানকে সবাই চিনবে। জানবে আমি তোমায় কত ভালোবাসি।’ প্রেমের ধর্মই হল নিজেকে প্রকাশ করা। রণজিতের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছিল। বিবি মোরানকে তিনি ভালোবাসেন কিন্তু সেকথা কি শুধু তাঁর প্রিয়তমা মোরানই জানবেন? সংসারকে সেটা জানাতে হবে না? তাই তাঁর মুদ্রায় মোরানের প্রতীক হয়ে ময়ূর ছাপ থেকে গেল। কিন্তু তাতেই দেশের মানুষের কাছে মোরান বুঝি আরো অপ্রিয় হয়ে উঠলেন। তথাকথিত ধর্মীয় নেতারা সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আগুনে গোপনে সন্তর্পনে আরো ইন্ধন যোগাতে লাগলেন। তাঁদের মনে হল, মোরানের প্রেমের ফাঁদ আসলে মরণফাঁদ ছাড়া অন্য কিছু নয়। এ কেমন মোহিনী, যাঁর মোহ কিছুতেই কাটে না? তখন পর্যন্ত বিবি মোরানের কোন পুত্র ছিলেন না, কিন্তু তিনি যদি কোনদিন মা হন, তাহলে রাজা কি তাঁর ছেলেকেই সিংহাসনে বসাবেন না? আবার বিধর্মীরাজ? ওদিকে সুখের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে রণজিৎ আরও এক কাণ্ড করে বসেছিলেন। একদিন তিনি ঠিক করেছিলেন যে, তাঁর আদরের ঘোড়া দুলুর পিঠে তিনি মোরানকেও সওয়ার করবেন। সেকথা শুনে মোরান আনন্দে খিলখিল করে হেসে হাততালি দিয়ে উঠেছিলেন। এর আগে তিনি রাজার সঙ্গে হাতির হাওদায় বসেছিলেন, শিকারের সময়ে সঙ্গী হয়ে রাজার সঙ্গে তাঁবুতে থেকেছিলেন, হরিদ্বারে তীর্থভ্রমণেও গিয়েছিলেন, কিন্তু তাই বলে একেবারে প্রকাশ রাজপথে রাজার সঙ্গে ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হওয়া? তরল আগুন কণ্ঠে ঢেলে রণজিৎও মোরানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে হেসে উঠেছিলেন, তিনি তো ঠিক ওভাবেই নিজের জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হাতির পিঠে চাপা আর দুলুর পিঠে চড়া তো এক কথা ছিল না। শিক্ষিত ঘোড়া তাঁর প্রভুর ইঙ্গিতে উল্কার বেগে ছুটতে শুরু করে দিয়েছিল। ভয়ে-বিস্ময়ে, হর্ষে-উল্লাসে চিৎকার করে উঠে মোরান রণজিৎকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। সেটা ছিল প্রাণভয়ে আঁকড়ে ধরা। রণজিৎ উচ্চস্বরে হেসে উঠে তাঁকে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক এমনি করে ধরে থাকো আমায়। কোন ভয় নেই তোমার।’ রাজপথের ওপর দিয়ে তাঁদের দু’জনকে নিয়ে ঘোড়া ছুটে গিয়েছিল। সেই দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে নিজেদের কাজকর্ম ফেলে দিয়ে পথের দু’পাশের সবাই তাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। একে মুসলমান নর্তকী, তাঁকে বিয়ে করে জেনানায় নিয়ে গিয়েও শখ মেটেনি রাজার, শেষে কিনা রাজপথে সকলের চোখের সামনে ওই ধরণের লজ্জাহীন আশ্লেষমত্ত ভ্রমণ? সেই ঘটনায় গোটা শিখসমাজ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। লোকাচারে যাই থাকুক না কেন, যবনী তাঁদের কাছে ঘৃণার পাত্রী ছিলেন। তাছাড়া প্রকাশ্যে এহেন আচরণ ধর্মবিরুদ্ধও ছিল। ইন্ধন যোগাবার জন্য নেতারা তো ছিলেনই। এরপরে প্রজারা রণজিতের বিরুদ্ধে সমবেত হয়ে স্বর্ণমন্দিরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

অভিযোগ পেয়ে পুরোহিতরা বিচারে বসেছিলেন। রণজিতের বিরুদ্ধে তাঁদের একাংশের মন তো অনেক দিন ধরেই তিক্ত হয়েছিল, আর বাকিরা প্রজাদের দাবিকেই বড় করে দেখতে চেয়েছিলেন। তবে বাস্তবে তাঁদের ক’জনের সঙ্গে প্রকৃত জনসমর্থন ছিল, ইচ্ছে করেই সেই প্রসঙ্গ তাঁরা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। অনেক বিচার বিবেচনার পরে তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন যে, মহারাজা রণজিৎ সিংকে ‘তনখাইয়া’ করা হল। রাজা হলেও তিনি তখন একা হয়ে গিয়েছিলেন, কেন না তিনি সমাজচ্যুত হয়েছিলেন। সেই ঘোষণায় রণজিৎ চমকে উঠেছিলেন। এমন শাস্তি কেন? কোন অপরাধ তো তিনি করেননি। তখনও তিনি গ্রন্থসাহেবের অর্চনা করে তবেই নিজের দিন শুরু করতেন। তাঁর রাজ্যের প্রজারা সুখে ছিলেন। শত্রুরা তাঁর দেশ আক্রমণ করতেও সাহস পায়নি। সব শুনে তিনি স্বর্ণমন্দিরে ছুটে গিয়েছিলেন, যে আধুনিক মন্দিরের রূপকার ছিলেন তিনি, সেই মন্দিরে। পুরোহিতদের কাছে তিনি জানতে চেয়েছিলেন যে, কেন তাঁকে তনখাইয়া করা হল? কী তাঁর অপরাধ? তিনি অন্ততঃ একটিবারের জন্য আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চেয়েছিলেন। তাঁকে সেই সুযোগ দিয়ে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছিল যে, কেন তিনি একজন যবনীকে বিবাহ করেছেন? রণজিৎ সিং নিজের উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমি একজন রাজা। আমার রাজত্বে হিন্দু-মুসলমান-শিখ সবাই সমান, তাঁদের মধ্যে আমি কোন প্রভেদ দেখি না, দেখতে পারি না। আমার কথায় ও কাজে সমতা রাখবার জন্যই আমি ইসলাম ধর্মাবলম্বীকে বিবাহ করেছি। কোন অন্যায় তো করিনি বরং দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।’ রাজার কূটকৌশলে পরাস্ত হয়েও মন্দিরের পুরোহিতেরা কিন্তু নিজেদের হার স্বীকার করেন নি। তাঁরা বলেছিলেন, ‘আপনি রাজা বলেই আপনি প্রজাদের আদর্শ। অন্যায় করলে তাঁরা উদাহরণ হিসাবে আপনাকে দেখাবে। আপনি অপরাধী এবং আপনাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’ রণজিৎ সিং বলেছিলেন, ‘বেশ শাস্তি দিন। আমি কথা দিলাম, মাথা পেতে নেব সেই শাস্তি।’ এরপরে পুরোহিতেরা অনেক বিচার করে রায় দিয়েছিলেন যে, স্বর্ণমন্দির প্রাঙ্গণে যে তেঁতুলগাছটা রয়েছে, সেই গাছে রণজিৎকে বেঁধে রাখা হবে। পরদিন সকালে প্রথম যে দর্শক মন্দির দর্শনে আসবেন, তিনি তাঁকে একশো ঘা চাবুক মারবেন। রণজিৎ আগে থেকেই সাধারণ মানুষের পোশাক পরে সেই গাছে বাঁধা থাকবেন। এর ফলে যিনি তাঁকে চাবুক মারবেন, তিনি জানতেও পারবেন না যে কাকে তিনি চাবুক মারছেন। তখন স্বর্ণমন্দিরে অমন শাস্তি অনেকেরই হত, আর যে চাবুক মারত, সে সামাজিক কর্তব্যপালন করছে মনে করে বেশ খুশি হয়েই কাজটা করত। তবে সব সময়ে যে কোন অজ্ঞাত ব্যক্তি অপরিচিতের হাতে মার খেতেন তা নয়। সাধারণতঃ যিনি মন্দিরে গিয়ে অভিযোগ জানাতেন, তিনিই কাজটা করতেন। রণজিতের ক্ষেত্রে পুরোহিতেরা অবশ্য কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন। রণজিৎ সিংহ শুধুমাত্র দেশের শাসক ছিলেন না, তিনি স্বর্ণমন্দিরের জন্য অকাতরে অর্থব্যয়ও করেছিলেন। উৎসবের সময়ে তিনি দীন দুঃখীদের মধ্যে নিজের দু’হাতে অজস্র মুদ্রা বিলিয়ে দিতেন। রণজিৎ অবশ্য পুরোহিতদের সেই বিচারে খুশিই হয়েছিলেন। তিনি ধর্মনিষ্ঠ রাজা ছিলেন, একশো ঘা চাবুক খেলে যদি তাঁর আরোপিত পাপস্খলন হয় তো তিনি তাতেই রাজি ছিলেন। তাই স্বর্ণমন্দির সংলগ্ন তেঁতুলগাছে রণজিৎকে শক্ত করে বাঁধা হয়েছিল। সেই গাছটি আজও প্রেমের জন্য ‘তনখাইয়া’ হওয়া রাজার বিচার নিজের চোখে দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাছে বাঁধা অবস্থায় বুকে তাঁর মোরান বিবির জন্য অফুরান ভালোবাসা রণজিৎ প্রতীক্ষা করছিলেন। তাঁর মনেও কৌতূহল ছিল যে, প্রজারা কি সত্যিই তাঁকে অপরাধী ভাবেন? সেদিন প্রথম যে ব্যক্তিটি মন্দিরে এসেছিলেন, তিনি নিতান্তই একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। তাঁকে ‘তনখাইয়া’ লোকটিকে একশো ঘা চাবুক কষাতে বলা হয়েছিল। সেকথা শুনে তিনি নির্দ্বিধায় নিজের হাতে চাবুক তুলে নিয়েছিলেন। তিনি জানতেন যে, সেটা তাঁর নৈতিক কর্তব্য। রণজিৎ তাঁর দিকে নির্ভয়ে তাকিয়ে ছিলেন। তাঁর একটি চোখ দৃষ্টিহীন হলেও অন্যটি কিন্তু অন্তর্ভেদী ছিল। অন্য সময় হলে সেই সামান্য লোকটি তাঁর মুখের দিকে তাকাতে সাহসই করতেন না। কিন্তু রণজিৎ যাই ভাবুন না কেন, সাধারণ মানুষ অত বোকা হয় না। ওই মানুষটি চাবুক হাতে নিয়ে তাঁর কয়েক পা এগিয়েই বুঝতে পেরেছিলেন যে, যাঁকে তিনি চাবকাতে চলেছেন সে একেবারে অন্যরকমের। এরপরে তিনি ভাবতে চেষ্টা করেছিলেন যে, গাছে বাঁধা ওই মানুষটি কে হতে পারেন? কাকে তিনি চাবুক মারতে চলেছেন? সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মনে পড়ে গিয়েছিল একটা ধর্মীয় মিছিলের কথা। মন্দির প্রাঙ্গণেই সেই মিছিল হয়েছিল। তারপরেই তাঁর মনে পড়েছিল যে, সেদিন তিনি ছিলেন প্রার্থী আর এই মানুষটিই ছিলেন দাতার ভূমিকায়। পুরানো কথা মনে পড়তেই লোকটি শিউরে উঠেছিলেন। কি সর্বনাশ! এ তিনি কাকে চাবুক মারতে চলেছিলেন! লোকটি মহারাজা রণজিৎ সিংহকে চিনতে পেরেছিলেন। আর চিনতে পেরেই চমকে উঠে তিনি চাবুক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পাঞ্জাবকেশরী রণজিৎ সিংহকে, তাঁদের দেশের রাজাকে তিনি চাবুক মারতে পারবেন না। তাঁকে পালিয়ে যেতে দেখে রণজিতের মুখেও মৃদু হাসি ফুটে উঠেছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, দেশের মানুষ তাহলে তাঁকে অপরাধী ভেবে শাস্তি দিতে এগিয়ে আসেননি; মুষ্টিমেয় মানুষের খেয়ালখুশিই দশের কথা হয়ে উঠেছে। রণজিৎ মুখে কিছু না বললেও সেই অপমানে তাঁর বিচারকদের মুখ কিন্তু কালো হয়ে উঠেছিল। রণজিৎ তাঁদের বলেছিলেন, ‘আমার প্রজা তো আমাকে চাবুক মারতে পারল না। এবার আপনাদের বিধান কি?’ এরপরে আবার নতুন করে রণজিতের বিচার শুরু হয়েছিল। রাজা যদি অপরাধ করেন তাহলে কি তিনি শাস্তি পাবেন না? শাস্তি তো তাঁকে পেতেই হবে। রণজিতের দুর্বলতা যদি প্রেম হয়, তাহলে ধর্ম তাঁর শক্তি ছিল। তাই অবিচারের আশঙ্কা থাকলেও তিনি পুরোহিতদের সুবিচারের আশা নিয়ে বসে ছিলেন। শেষে অনেক আলোচনার পরে পুরোহিতেরা রায় দিয়েছিলেন যে, তাঁকে বিবি মোরানকে চিরদিনের মত ত্যাগ করতে হবে। রণজিৎকে তাঁকে পাঠিয়ে দিতে হবে পাঠানকোটে, অর্থাৎ শতদ্রুর নদের পূর্বপারে; ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুসারে, যেখানে রণজিৎ কোনদিনই যেতে পারবেন না, সেখানে। ‘সে কি?’ রণজিৎ চমকে উঠেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বিবি মোরান তো আপনাদের কাছে কোন অপরাধ করেনি। তাছাড়া সে আমার স্ত্রী। তাঁকে ত্যাগ করতে হবে কেন?’ রণজিৎ যতই যুক্তি দিন না কেন, পুরোহিতেরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে গিয়েছিলেন। সেবার তাঁদের চালে কোন ভুল হয়নি, তাঁরা বুঝেছিলেন যে, বিবি মোরানের সঙ্গে চিরবিচ্ছেদই রণজিতের জন্য সবচেয়ে কঠিন শাস্তি। আর অপরাধ? প্রজানুরঞ্জনের জন্য রামচন্দ্র নিজের নিরপরাধিনী স্ত্রীকে বিসর্জন দেননি? তাঁরা জানিয়েছিলেন যে, রণজিৎ তাঁর ধন দৌলত যা খুশি বিবি মোরানকে দিন, তাতে কারো কোন আপত্তি নেই; একজন রানির মতোই পাঠানকোটে তিনি নিজের বাকি জীবনটা কাটান, শুধু রণজিৎ তাঁর সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখতে পারবেন না। সব শুনে রণজিৎ স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলেন। তাঁর আবেদন নিবেদন সবই অরণ্যে রোদনের মতো নিষ্ফল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেন নি। কারণ, তিনি আগেই কথা দিয়ে ফেলেছিলেন যে, তাঁকে যে শাস্তিই দেওয়া হোক না কেন, তিনি সেটা মাথা পেতে স্বীকার করে নেবেন। কাজেই তাঁকে পুরোহিত সম্প্রদায়ের সেই বিধান মেনে নিতে হয়েছিল।
এরপরে কি হয়েছিল? রণজিৎ কি করে মোরানকে সেই দুঃসংবাদ দিয়েছিলেন, নিজের কত অশ্রু বিসর্জন দিয়ে মোরান পাঞ্জাবকেশরীর জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন, তা আজও কেউ জানেন না। পাঠানকোটে রণজিৎ আর কোনদিনই যাননি। যাঁরা ভেবেছিলেন যে, রণজিৎ যোদ্ধা শিখদের যূথবদ্ধ করে মারাঠা শক্তির মতো শিখদেরও স্বদেশ ও স্বজাতির প্রেমে মাতিয়ে তুলবেন, তাঁদের সবদিক থেকে হতাশ করে দিয়ে রণজিৎ তাঁর বাকি জীবনটা বিলাসিতার মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর জেনানা রানীদের নিয়ে ভরে উঠেছিল। অমৃতসরের নর্তকী ‘গুলবাহার’কে বেশ ঘটা করে লোক দেখিয়ে তিনি প্রথমে বিবাহ করেছিলেন, তারপরে স্বর্ণমন্দিরে গিয়ে সেই বিবাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনাও করেছিলেন! ওদিকে বেগম হয়েও গুলবাহার তাঁর সঙ্গে ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে শুরু করেছিলেন। এরপরে এসেছিলেন আরো কয়েকজন – ‘জিন্দ কালান’, ‘তাবু’, ‘জিনৎ বিবি’, ‘গোবি’ – তাঁরা সকলেই রণজিতের মুসলমান রানী ছিলেন। এছাড়াও এসেছিলেন ‘রানী জিন্দন’; তাঁর পিতা ‘মানা সিং’ তো নর্দমা পরিষ্কার করবার মতো সামান্য কাজ করতেন! কিন্তু ‘জিন্দ কাউরের’ নাচই তাঁকে রণজিতের অন্দরমহলে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল। দলীপ সিং তাঁরই ছেলে ছিলেন, যিনি নিজেকে রণজিতের ছেচল্লিশজন স্ত্রীর একজনের পুত্র বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু রণজিতের এত রানী, এত লোক দেখানো আড়ম্বর – সে সবের পিছনে কি সত্যিই কোন কারণ ছিল না? জীবনের উত্থানপর্বের সেই মানুষটাই হঠাৎ কেমন যেন বদলে গিয়েছিলেন। রণজিৎ সিংহ কোনদিনই সরাসরিভাবে শিখদের নিয়ে বিশাল রাজ্য সৃষ্টি করেননি, মোরানের ঘটনার পরে তিনি হিন্দু-মুসলমান-শিখ নির্বিশেষে প্রজাদের সুখ দুঃখের শরিক হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের রাজধানী তিনি আগেই লাহোরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপরে হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই তিনি স্বর্ণমন্দিরে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিলেন। হয়ত তাঁর একের পর এক যুদ্ধে জয়ী হওয়াও সেটার পিছনে একটা বড় কারণ। ওই পরিস্থিতিতে সবাই যখন আশা করেছিলেন যে, ইংরেজদের সঙ্গে হওয়া চুক্তির মেয়াদ আর না বাড়িয়ে দিয়ে রণজিৎ শতদ্রুর পূর্বপাড়ে তাঁদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়বেন, সমগ্র শিখশক্তিকে একত্র করে নিয়ে দিল্লী জয়ের স্বপ্ন দেখাবেন, তখন রণজিৎ সেই পুরনো চুক্তির জের স্বীকার করে কেন যে আর কোনদিনই পাঠানকোটের দিকে এগিয়ে যাননি, ইতিহাসের কাছে সেই হেঁয়ালির আজও কোন উত্তর নেই। ভুলে যাওয়া বিবি মোরানের স্মৃতিই কি সেটার পিছনে মূল কারণ ছিল? মানুষ হারিয়ে গেলেও, প্রেম কিন্তু কখনও হারিয়ে যায় না। তাই শতদ্রু নদ আজও রণজিৎ সিংহ ও বিবি মোরানের কথা বলে। অনেক ঘটনার সাক্ষী স্বর্ণমন্দিরের সেই তেঁতুল গাছটাও নিজের ঝিরঝিরে পাতা নেড়ে আজও সবাইকে সেদিনের কথা মনে করিয়ে দিতে চেষ্টা করে। ইতিহাস যেমন প্রেমের মিলন দেখায়, তেমনি বিচ্ছেদটাও দেখিয়ে দেয়।

(তথ্যসূত্র:
১- Maharaja Ranjit Singh and His Times: Sarkar-E-Khalsa, Dr Jasbir Singh Ahluwalia & Dr. Parambakhshish Singh.
২- Ranjit Singh: Maharajah of the Punjab, Khushwant Singh.
৩- Ranjít Singh, Lepel Griffin.
৪- Origin of the Sikh Power in the Punjab and Political Life of Maharaja Ranjit Singh: With an Account of the Religion, Laws, and Customs of Sikhs, Henry Prinsep.
৫- The Real Ranjit Singh, Fakir Syed Waheeduddin.
৬- Emperor of the Five Rivers: The Life and Times of Maharaja Ranjit Singh, Mohamed Sheikh & Baron Sheikh.)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

‘শের খাঁ-হুমায়ুন সংবাদ’ (প্রথম পর্ব)‘শের খাঁ-হুমায়ুন সংবাদ’ (প্রথম পর্ব)

হরানা চক্রবর্তীঃ ‘ঘোরী নগরী’ আফগানিস্থানে অবস্থিত হলেও ‘মহম্মদ ঘোরী’ জাতিতে আফগান ছিলেন না। তরাইন প্রান্তরে একদল আফগান যেমন তাঁর তুর্কী ফৌজের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছিলেন, আরেকদল আফগান তেমনি পৃথ্বিরাজের পক্ষ

গাছেদের কথা বলাগাছেদের কথা বলা

জার্মান লেখক পিটার উললেবেনের বক্তব্য সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে। উনি বলছেন যে নিজেদের মধ্যে কথোপকথন করে থাকে গাছেরাও অনেকটা আড়ালে আড়ালেই ভূগর্ভস্থ মাইসেলিয়াল তন্তুর মধ্যে দিয়েই, অর্থাৎ মাটির নীচে

‘রানী মুদিনীর গলির কথা’‘রানী মুদিনীর গলির কথা’

রানা চক্রবর্তীঃ একদা পুরানো কলকাতার যে গলিটির নাম ছিল ‘রানী মুদিনীর গলি’, পরবর্তীকালে সেটারই নাম হয়েছিল ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান স্ট্রীট’, আর সেটারই বর্তমান নাম হল ‘সিরাজুদ্দৌল্লা সরণি’। কলকাতার কিছু রাস্তার নাম

ঈশ্বরের সন্ধানে বিজ্ঞানঈশ্বরের সন্ধানে বিজ্ঞান

ঈশ্বর বলতে আমরা ঠিক কি বুঝি ? এমন কোন মহাশক্তি যাকে দেখা যায় না, স্পর্শ করা যায় না, এমনকি মাপাও যায় না কিন্তু আমাদের মানব জীবন সহ সমগ্র জীব জগতে