ঈশ্বরের সন্ধানে বিজ্ঞান - Ei Bangla
Ei Bangla ব্লগ ঈশ্বরের সন্ধানে বিজ্ঞান

ঈশ্বরের সন্ধানে বিজ্ঞান


ঈশ্বর বলতে আমরা ঠিক কি বুঝি ? এমন কোন মহাশক্তি যাকে দেখা যায় না, স্পর্শ করা যায় না, এমনকি মাপাও যায় না কিন্তু আমাদের মানব জীবন সহ সমগ্র জীব জগতে যার বা যাদের প্রভাব অসীম। কিন্তু এখানে অনেকেই প্রশ্ন তুলবেন

১) ঈশ্বর বলে যদি কিছু থেকেই থাকে তবে যুগ-যুগান্তর কাল ধরে তাঁর বা তাঁদের অস্তিত্ব এখনও পর্যন্ত কোন ভক্ত কেন প্রমান করতে পারলেন না। কেন আজ পর্যন্ত কেউ তাঁর বা তাঁদের দেখা পেলেন না। কেনই বা আজ পর্যন্ত কোন তথাকথিত ঈশ্বর বা ঈশ্বরদের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেল না। টাইম ট্রাভেল, ওয়ার্ম হোল, টাইম ডাইলেশন, ব্ল্যাক হোলের মতবাদও আজ পর্যন্ত কেউ নিজের চোখে দেখতে বা দেখাতে পারেননি। কিন্তু অঙ্কের সমীকরণ দিয়ে অন্তত প্রমানিত করেছেন। তাহলে আজ পর্যন্ত কোন ভক্ত কেন নিদেন অঙ্কের সমীকরণ দিয়েও ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমান করতে পারলেন না ?

২) এছাড়া ইতিহাস অনুসারে যুগে যুগে যখন সনাতনী ধর্মের ঈশ্বরদের উপাসনালয় আর মূর্তিগুলি আক্রান্ত হয়েছে আব্রাহামিক ধর্মের জিহাদিদের দ্বারা, আবার আব্রাহামিক ধর্মের ইহুদি আর খ্রিস্টানদের উপাসনালয় গুলি আক্রান্ত হয়েছে ইসলামের দ্বারা আবার স্পেন, ইজরায়েল, চিন, পাকিস্তান, আফগানিস্থান, ইরাক সহ অনান্য জায়গায় যখন ইসলামের উপাসনালয় গুলিও আক্রান্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী আর জিহাদি সংগঠনগুলোর দ্বারা তখনই বা কেন কোন ঈশ্বর মর্ত্যে আবির্ভূত হলেন না তাঁদের মূর্তি আর উপাসনালয় গুলি রক্ষা করার জন্য ?

৩) ঈশ্বরই যদি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা হবেন তাহলে ঈশ্বরকে সৃষ্টি করলো কে বা কারা ?

৪) মহাদেব, ইন্দ্র, কৃষ্ণ, কার্তিক, জিউস, অ্যাথেনা, আর্টিমিস, গণেশ, থর, ওডিন, বালডুর, জুপিটার, হোরাস, সেথ, থট, আনুনাকি, সহ হিন্দু আর অন্যান্য প্রাচীন সনাতনী ধর্মীয় পুরানগুলিতে বর্ণিত দেব-দেবীরা যদি সত্যিই ঈশ্বর হবেন তাহলে তাঁদের দ্বারা ব্যবহৃত প্রযুক্তি আর অস্ত্রের সাথে এখনকার দিনের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, টাইম ডাইলেশন থিয়োরি, স্ট্রিং থিয়োরি ইত্যাদি মিলে যাচ্ছে কিভাবে ? ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত দৈবিক অস্ত্রসস্ত্র, প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান তো মানুষের পক্ষে জানা বা আহরণ করা সম্ভব নয়।

এসব প্রশ্ন শুনেই বোঝা যাচ্ছে ঈশ্বর আসলে আলৌকিক শক্তির অধিকারী কোন সৃষ্টিকর্তা নন। তবে ঈশ্বর কে বা কারা ? বিজ্ঞানের পরিভাষায় ঠিক কাকে বা কাদের ঈশ্বর বলে অভিহিত করা উচিত ? ঈশ্বর হচ্ছে সেই বস্তু যাকে দেখা যায় না, স্পর্শ করা যায় না আর মাপাও যায় না। কিন্তু যার প্রভাব আমাদের জীব জগতের উপর অসীম অর্থাৎ

১) মাধ্যাকর্ষণ শক্তি
============
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হচ্ছে এমন এক শক্তি যার দ্বারা পৃথিবীতে জোয়ার, ভাঁটা সহ নানাবিধ কাজকর্ম হয়। হজম প্রক্রিয়া, হাঁটাচলার প্রক্রিয়া, দেহের কোষের বৃদ্ধি সহ মানব আর জীব দেহে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব অসীম

২) সময়
======
সময় হচ্ছে আরেক বৃহৎ শক্তি যাকে দেখা যায় না, শোনা যায় না। তবে অঙ্কের সমীকরণ দিয়ে প্রমান পাওয়া যায় আর ঘড়ি ও ক্যালেন্ডার দিয়ে মাপা যায়। সময়ের প্রভাবেই মানুষের জন্ম হয়, বয়স বাড়ে, বৃদ্ধ হয় ও শেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই কারনে সময়কে মহাকাল বলে অভিহিত করা হয়।

৩) স্থান বা স্পেস
===========
বিজ্ঞানের মতে ব্রহ্মান্ডের বিস্তার অনন্ত। বিগ ব্যাঙ বিস্ফোরণের পূর্বে সমস্ত কিছু একটা সিঙ্গুলারিটি বিন্দুতে সীমাবদ্ধ থাকলেও বিস্ফোরণের পরে ক্রমেই অনন্ত দিগন্তে প্রসারিত হচ্ছে আমাদের ব্রহ্মান্ড। অর্থাৎ অনন্ত দিগন্ত বলতে infinite space বা অসীম স্থানকে বোঝানো হচ্ছে। স্থানের অস্তিত্ব না থাকলে মহাকাশ বা মহাশূন্যের অস্তিত্ব থাকতো না। মহাকাশের অস্তিত্ব না থাকলে পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, মঙ্গল, বৃহস্পতি গ্রহ সহ ব্রহ্মান্ডের কোন গ্রহ আর নক্ষত্রেরও অস্তিত্ব থাকতো না।

৪) পৃথিবীর জিও ম্যাগনেটিক পোল
=====================
পৃথিবীর চৌম্বকীয় মেরু শুধুমাত্র কম্পাসের সাহায্যে পৃথিবীর দিক নির্ণয় করতেই সাহায্য করে না। সূর্য থেকে ধেয়ে আসা আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি, গামা রশ্মি সহ একাধিক ক্ষতিকারক রশ্মির আগ্রাসনের হাত থেকে পৃথিবীর বায়ু মণ্ডল ও পৃথিবীবাসী প্রাণীদের রক্ষা করে

৫) মৌলিক কনা
==========
মৌলিক কণা বা প্রাথমিক কণা হল সেসব কণা , যাদের ক্ষুদ্রতর কোন ভিত্তি বা গাঠনিক একক নেই অর্থাৎ এরা অন্য কোনো ক্ষুদ্রতর কণার সন্নিবেশে গঠিত হয়নি। আপ, ডাউন, চার্ম, ইলেকট্রন, ফোটন, হিগস বোসন, ইলেকট্রন নিউট্রিনো, টাও নিউট্রিনো সহ অনান্য মৌলিক কনাগুলোর দ্বারাই মানুষ ও অনান্য জীবজন্তু সহ ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় জড় ও অজড় পদার্থের গঠন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর অস্তিত্ব বিজ্ঞান আজ আবিস্কার করেছে। কিন্তু হিগস বোসন সহ কিছু কিছু মৌলিক কনার আবিস্কার এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। তবে তাদের অস্তিত্ব অনুভব করা যায়।

৬) হিগস ফিল্ড আর হিগস বোসন কনা
========================
হিগস ফিল্ড হচ্ছে এমন এক অদৃশ্য ক্ষেত্র যা আমাদের ব্রহ্মাণ্ড গঠনে প্রতিনিয়ত সাহায্য করছে। এই হিগস ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে হিগস-বোসন নামের এমন এক মৌলিক কনা যা ইলেকট্রন, কোয়ার্ক সহ ব্রহ্মাণ্ডের অনান্য মৌলিক কনাগুলি ভর বা মাস প্রদান করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এক কথায় হিগস বোসন কনার সাহায্যেই আমরা ভর পাই। যদি হিগস বোসন কনার অস্তিত্ব না থাকতো তাহলে এই ব্রহ্মাণ্ডে ইলেকট্রন, প্রোটন, কোয়ার্ক সহ কোন পদার্থরই নিজস্ব ভর থাকতো না। ফলে কোন পদার্থই আর একে অপরকে আকর্ষণ করতো না আর তারা আলোর সমান গতিবেগে ক্রমাগত ভ্রমন করতে থাকতো। এর ফলে পৃথিবী সহ অন্য কোন গ্রহেই জীব জগতের অস্তিত্ব থাকতো না

৭) ঘোস্ট পার্টিকেল
============
ঘোস্ট পার্টিকেল অর্থাৎ ভৌতিক কনা নিউট্রিনো হচ্ছে সাব অ্যাটমিক পর্যায়ের এক মৌলিক কনা যাকে দেখা যায় না, শোনা যায় না, স্পর্শ করাও যায় না। কিন্তু নিউট্রিনো হচ্ছে সাব অ্যাটমিক পর্যায়ের লেপটনের অন্তর্ভুক্ত ইলেকট্রনের negetively charged এমন এক মহাগুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কনা প্রোটন, নিউট্রন আর পরমানু গঠনে যার ভূমিকা বা অবদান অপরিসীম। আবার এই পরমানু দিয়েই গঠিত হয়েছে জীব জগত সহ ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত দ্রষ্টব্য জড় ও অজর পদার্থ।

৮) ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি
=====================
আমাদের বিজ্ঞানীদের মতে আমরা মানবজাতি আজ পর্যন্ত অনন্ত এই ব্রহ্মাণ্ডের মাত্র ৬% পদার্থের সন্ধান পেয়েছি। বাকি ৯৪% পদার্থ এখনও পর্যন্ত অধরাই রয়ে গিয়েছে। এই ৯৪% পদার্থ হচ্ছে ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি। বিজ্ঞানীদের মতে ব্রহ্মাণ্ড গঠনে এই অদৃশ্য শক্তি ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জির ভূমিকা অপরিসীম। ভবিষ্যতে যদি মানবজাতি কোনদিন ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জির সামান্য কিছু অংশেরও সন্ধান পায় তাহলে বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান মানবজাতির ক্ষমতা রামায়ন, মহাভারত, বেদ, বেদান্ত, সুমেরীয়, মিশরীয় নর্স, মায়ান, গ্রীক পুরান, হিব্রু আর খ্রিস্টান বাইবেল ও কোরানে বর্ণিত তথাকথিত ঐশ্বরিক ক্ষমতার সমতুল্য হয়ে যাবে। সেদিন মানুষ হয়তো ডার্ক ম্যাটারের সাহায্যে শারীরিক ভাবে নিজেদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চোখের নিমেষে টেলিপোর্ট করতে আর কৃত্রিম ওয়ার্মহোল নির্মাণ করে ইন্টারস্টেলার মহাকাশ ভ্রমন ও টাইম ট্রাভেল করতেও সফল হবে

৯) অ্যান্টি ম্যাটার
===========
বাস্তব বিজ্ঞানের জগতে ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জির মতো অ্যান্টি ম্যাটারেরও আবিস্কার হয়নি। কিন্তু অঙ্কের সমীকরণ দ্বারা অ্যান্টি ম্যাটারের অস্তিত্ব প্রমানিত হয়েছে। অ্যান্টি ম্যাটার হলো বিজ্ঞানের দ্বারা আবিষ্কৃত আমাদের চির পরিচিত মৌলকনা গুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত। বিজ্ঞানীদের মতে অ্যান্টি ম্যাটার আর সাধারন ম্যাটারের মধ্যে সামঞ্জস্যের কারনেই আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে। কিন্তু যদি কোনদিন সাধারন মৌলকনা আর অ্যান্টি ম্যাটারের মধ্যে সংঘর্ষ হয় তবে সেদিন আমাদের পৃথিবী সহ সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে অস্তিত্ব বিলোপ ঘটবে। অ্যান্টি ম্যাটারকে অনেকে এক্সোটিক ম্যাটার বলেও অভিহিত করেন। অনেক বিজ্ঞানীদের মতে মানুষ যদি কোনদিন কৃত্রিম উপায়ে ওয়ার্মহোল নির্মাণ করতে সফলও হয় বা ইন্টারস্টেলার সিনেমার মতো মহাকাশে যদি কোন পূর্ব নির্মিত ওয়ার্মহোলের সন্ধান লাভ করে তাহলেও সেই ওয়ার্মহোলের মধ্যে দিয়ে মহাকাশযান সমেত যাতায়াত করা সম্ভব হবে না। কারন ওই ওয়ার্মহোল এতটাই অস্থির থাকবে যে সেটা যে কোন মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তবে মানুষ যদি সত্যি সত্যি কোনদিন অ্যান্টি ম্যাটারের অস্তিত্বের সন্ধান পায় তবে এই বিশেষ পদার্থের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে নির্মিত ওয়ার্মহোলকে মহাকাশযান যাতায়াতের জন্য যথেষ্ট স্থিতিশীল করে তোলা যাবে।

১০) ব্ল্যাক হোল আর হোয়াইট হোল
=====================
ব্রহ্মাণ্ডের আরেক বিস্ময়ের নাম কৃষ্ণ গহ্বর আর শ্বেত গহ্বর। আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতানুসারে যদি কোন বিশাল নক্ষত্রের ভেতরে অবস্থিত যাবতীয় পদার্থ কোন এক ক্ষুদ্র পরিসরের মধ্যে সঙ্কুচিত করে রেখে দেওয়া যায় তাহলে সেই তারকা রূপান্তরিত হবে এক কৃষ্ণ গহ্বরে। এতো ক্ষুদ্র পরিসরে এতো বিপুল পরিমানে অনন্ত এনার্জির উপস্থিতির কারনে কৃষ্ণ গহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতো বিপুল আর অজুদ পরিমানে থাকে যে সেই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব খণ্ডন করা সম্ভব হয়না আলোর মতো ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে দ্রুততম পদার্থের পক্ষেও। এই কারনে ব্ল্যাক হোলের ভেতরে বিরাজ করে চিরস্থায়ী ঘন অন্ধকার। ব্ল্যাক হোলের ভেতরে স্থান বদলে যায় কালে আর কাল বদলে যায় স্থানে। কৃষ্ণ গহ্বরের ক্ষমতা অসীম। কোন বস্তু একবার কোন কৃষ্ণ গহ্বরের হরাইজন বিন্দুতে প্রবেশ করলে সেই বস্তুর পক্ষে আর ফিরে আসা সম্ভব হয়না। সেই বস্তু বা বস্তুগুলো চিরতরে আটকে পড়ে কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতরে। এই কৃষ্ণ গহ্বরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে সিঙ্গুলারিটি পয়েন্ট। হকিংস বিকিরণের প্রভাবে ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে হতে একসময় বিনাশ ঘটে কৃষ্ণ গহ্বরের। সেই সাথে অস্তিত্ব বিলোপ হয় কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতরে আটকে পড়া যাবতীয় পদার্থগুলোরও। এই ব্ল্যাক হোলকেই অন্ধকার জগতের শয়তানদের প্রধান ডরমামু হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়েছিল ২০১৬ সালের ডক্টর স্ট্রেঞ্জ সিনেমায়।

কৃষ্ণ গহ্বরের ঠিক উল্টো রূপ হচ্ছে শ্বেত গহ্বর। কৃষ্ণ গহ্বর তার অনন্ত মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা আলো সহ যেমন এই ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় পদার্থকে গিলে খেয়ে নেয় শ্বেত গহ্বর ঠিক তার উল্টোটা করে। শ্বেত গহ্বর তার ভেতরে অবস্থিত যাবতীয় পদার্থকে বাইরে উগড়ে দিয়ে নিত্য নতুন সৃষ্টি করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্বের সন্ধান পেলেও হোয়াইট হোলের বাস্তবিক অস্তিত্বের সন্ধান আজপর্যন্ত মেলেনি। শুধুমাত্র অঙ্কের সমীকরণ আর তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানেই সীমাবদ্ধ রয়েছে শ্বেত গহ্বর। কৃষ্ণ গহ্বর আর শ্বেত গহ্বরের শক্তি অপরিসীম। বিজ্ঞানীদের মতে কেউ একবার কৃষ্ণ গহ্বরের হরাইজন পয়েন্টে পৌঁছে গেলে সে এতটাই তীব্র টাইম ডাইলেশনের শিকার হবে যে তার ঘড়ির কাঁটায় যতক্ষণে এক ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হবে পৃথিবীবাসীদের ক্যালেন্ডারে ততদিনে হয়তো ১০০০ বছর সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাবে। এছাড়াও তাত্ত্বিক ভাবে যদি কোন ব্যক্তি ব্ল্যাক হোলের ভেতরে প্রবেশ করে সিঙ্গুলারিটি বিন্দুর দিকে ধাবিত হতে থাকে তবে সে স্থান পরিবর্তনের বদলে টাইম ট্রাভেল করবে। কিন্তু আলোর অভাবে সে সেই টাইম ট্রাভেলের দৃশ্য দেখতে পাবে না। এছাড়া তাত্ত্বিক ভাবে যদি কোন কৃষ্ণ গহ্বরের অপরপ্রান্তে কোন শ্বেত গহ্বরের অস্তিত্ব থাকে তবে কোন ব্যক্তি যদি একবার ব্ল্যাক হোলের সিঙ্গুলারিটি বিন্দু অতিক্রম করতে পারে তবে সে তার চিরপরিচিত ব্রহ্মাণ্ড আর সময়কে পরিত্যাগ করে কোন সামন্তরাল ব্রহ্মাণ্ড বা অতীত অথবা ভবিষ্যৎকালের অন্য কোন সময় সরণিতে পৌঁছে যাবে। তাই ব্রহ্মাণ্ডের অন্যতম বিস্ময়কর শক্তির নাম কৃষ্ণ আর শ্বেত গহ্বর।

ব্রহ্মাণ্ড (Universe), স্থান (Space) আর কালের (Time) সাথে হিন্দু পুরানের মিল
=====================================================
পরিশেষে বলা যায় যে ব্রহ্মাণ্ড সহ ব্রহ্মাণ্ডের এইসব শক্তিগুলোকেই বিজ্ঞানের পরিভাষায় ঈশ্বর বলা চলে। আমরা জানি যে জীব জগত সহ সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় জড় ও অজড় পদার্থ অনু, পরমানু সহ যাবতীয় মৌলকনা দ্বারা গঠিত। মানুষ বা অন্য কোন প্রাণীর মৃত্যু ঘটলে তাঁদের শরীরের অনু-পরমানু সহ যাবতীয় মৌলকনা গুলোর কিন্তু অস্তিত্ব বিলোপ হয় না। ঠিক একইরকম ভাবে কোন বই পুড়িয়ে ফেললে বা গাছ কেটে ফেললে বা চেয়ার ভেঙে ফেললেও সেগুলোর মৌলকনা গুলোর কোনরূপ ক্ষতি বা অস্তিত্ব বিলোপ হয় না। মৌলকনা গুলো নিজেদের আকার পরিবর্তন করে মাত্র। বিজ্ঞান আজ প্রমান করেছে যে মানবদেহ প্রায় ৭ অক্টালিয়ন পরমানুর দ্বারা গঠিত (৭,000,000,000,000,000,000,000,000,000)। এইসব পরমানু গুলো কোটি কোটি বছর প্রাচীন। বিজ্ঞানীদের মতে বিগ ব্যাং বিস্ফোরণের সময় সিঙ্গুলারিটি পয়েন্ট থেকে ব্রহ্মাণ্ড চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে স্থান আর কালের (অর্থাৎ টাইম আর স্পেস) সাথে এইসব পরমানু গুলোও সৃষ্টি হয়েছিল। এসবের মধ্যে ব্রহ্মাণ্ড আর মানবদেহের সবচেয়ে সাধারণ আর প্রাচীন পরমানু হাইড্রোজেনের বয়স ১৩.৭ বিলিয়ন বছর। অর্থাৎ বিগ ব্যাং বিস্ফোরণের সময়ের। অর্থাৎ এর থেকে এটা প্রমানিত হচ্ছে যে ব্রহ্মাণ্ডই মানুষ সহ সমস্ত জীব জগতের সৃষ্টিকর্তা। এই ব্রহ্মাণ্ডকেই হিন্দু পুরানে ব্রহ্মা বলে অভিহিত করে হয়েছে। অর্থাৎ ব্রহ্মা আসলে ব্রহ্মাণ্ডের রূপক। শিব বা মহাদেবকে হিন্দু পুরানে মহাকাল বলে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মহাদেব সময়ের রূপক। আর বিষ্ণুকে অনন্ত বলে অভিহিত করা হয়েছে। আগেই লেখা হয়েছে যে বিগ ব্যাং বিস্ফোরণের পর অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের পরিধি দ্রুত গতিতে চতুর্দিকে সম্প্রসারিত হয়েই চলেছে। আগেই লেখা হয়েছে যে বিজ্ঞানের ভাষায় ব্রহ্মান্ডের এই অনন্ত সম্প্রসারণকে ইনফাইনাইট স্পেস অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ বিষ্ণু হচ্ছে আদতে স্পেস বা স্থানের রূপক। আবার সময় আর স্থান (Space & Time) হচ্ছে মূল ব্রহ্মাণ্ডেরই অন্তর্ভুক্ত এক প্রক্রিয়া যাদের অস্তিত্ব বিগ ব্যাঙের আগে ছিল না।

অর্থাৎ সংক্ষেপে বলতে গেলে বাস্তবে ঈশ্বর বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে সে হচ্ছে আমাদের এই অনন্ত আর রহস্যময় ব্রহ্মাণ্ড। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির সাহায্যে ব্রহ্মাণ্ডের এখনও পর্যন্ত মাত্র ৬% জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৬ সালের মুভি “ডক্টর স্ট্রেঞ্জ” এর মুভির গুরুমা “Ancient One” আর খোদ ডক্টর স্ট্রেঞ্জের মতে সঠিক পদ্ধতিতে যোগাসন আর ধ্যান করতে পারলে অ্যাস্ট্রাল ট্রাভেলের সাহায্যে হয়তো মানুষ তাঁর চেতনাকে স্ট্রিং থিয়োরিতে বর্ণিত এই ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন প্রান্তে আর বিভিন্ন মাত্রায় (ডায়মেনশন) নিয়ে যেতে সফল হবে। ২০২১ সালের মুভি “ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্যা ম্যাডনেস অফ মাল্টিভার্স” এও এই সাইকিক অর্থাৎ আধ্যাত্মিক শক্তিকে কাজে লাগিয়েই ব্রহ্মাণ্ডের একাধিক মাত্রায় ইচ্ছেমতো ভ্রমন করেছিল ডক্টর স্ট্রেঞ্জ। কিন্তু বিজ্ঞানের জগতে আর বাস্তব দুনিয়ায় আধ্যাত্মবাদ আর অ্যাস্ট্রাল ট্রাভেল স্বীকৃত নয়। অর্থাৎ কাল্পনিক। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে বিজ্ঞানের পরিধির বাইরে অজানা ব্রহ্মাণ্ডে অনেক অজানা শক্তি (এনার্জি) আর অমীমাংসিত রহস্য লুকিয়ে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

চীন, ভারতবর্ষ রাশিয়ার সাথে নিজেদের মুদ্রাতে ব্যবসা করছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাকী পূর্ব বনাম পশ্চিম! কোন পথে বিশ্ব রাজনীতি?চীন, ভারতবর্ষ রাশিয়ার সাথে নিজেদের মুদ্রাতে ব্যবসা করছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাকী পূর্ব বনাম পশ্চিম! কোন পথে বিশ্ব রাজনীতি?

১৫৫৫ সালে অর্থাৎ প্রায় চারশো বছর আগে ফ্রান্সের বিখ্যাত জ্যোতিষী নস্ত্রাদ্রামুস এমন কিছু ভবিষ্যত বানী করেছিলেন যা আজও মানুষকে অবাক করে দেয়। ওনার প্রায় অধিকাংশ ভবিষ্যত বানীই সত্য হয়েছিল যার

রামকৃষ্ণ ও বঙ্কিম – একটি বিতর্কিত অধ্যায়’ (দ্বিতীয় পর্ব)রামকৃষ্ণ ও বঙ্কিম – একটি বিতর্কিত অধ্যায়’ (দ্বিতীয় পর্ব)

রানা চক্রবর্তীঃ রামচন্দ্র দত্ত বঙ্কিমের জীবিতাবস্থাতেই ১২৯৭ বঙ্গাব্দে (বঙ্কিমের মৃত্যু হয়েছিল ১৩০০ বঙ্গাব্দে) তাঁর গ্রন্থে রামকৃষ্ণ-বঙ্কিম সাক্ষ্যাতের ঘটনাটি লিখেছিলেন। সেই সূত্র ধরে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, তাঁর লেখা যখন সঠিক

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খাবারপৃথিবীর সবচেয়ে দামি খাবার

পৃথিবীতে অনেক ধরনের খাবার রয়েছে। কিন্তু দামি খবার তো কিছু রয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে দামি খাবারের নামটি তো সবারই জানতে ইচ্ছা করে। আপনাদের সুবিধার্থে দিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খাবার।

‘রাজরোষে রামকৃষ্ণ মিশন’, (প্রথম পর্ব)‘রাজরোষে রামকৃষ্ণ মিশন’, (প্রথম পর্ব)

স্বামী বিবেকানন্দ পাশ্চাত্য জয় করে ভারতে প্রত্যাবর্তনের পরে প্রায় সমগ্র ভারতবর্ষ ঘুরে যে বক্তৃতাগুলি করেছিলেন, সেগুলোর অনেকটা জুড়েই সেই সময়ের যুবকদের উদ্দেশ্যে পরাধীন ভারতমাতার শৃঙ্খলমোচনে তৎপর হয়ে ওঠার দীপ্র আহ্বান