চিন্তা রেকর্ডিং করা ক্যামেরা থেকে তারবিহীন বিদ্যুৎ! নিকোলাস টেসলার যে ৪ টি আবিষ্কার আলোর মুখ দেখতে পায়নি - Ei Bangla
Ei Bangla ব্লগ চিন্তা রেকর্ডিং করা ক্যামেরা থেকে তারবিহীন বিদ্যুৎ! নিকোলাস টেসলার যে ৪ টি আবিষ্কার আলোর মুখ দেখতে পায়নি

চিন্তা রেকর্ডিং করা ক্যামেরা থেকে তারবিহীন বিদ্যুৎ! নিকোলাস টেসলার যে ৪ টি আবিষ্কার আলোর মুখ দেখতে পায়নি


নিকোলা টেসলা! যার হাত ধরে পৃথিবীতে শুরু হয়েছিল সহজলভ্য বিদ্যুৎশক্তির যুগ। তার একের পর এক আবিষ্কার সমাজের চিত্র পরিবর্তন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। যেমন – তাঁর আবিষ্কৃত এসি জেনারেটর ও মোটরের শক্তি দিয়ে শুরু হয় ব্যাপক শিল্পোৎপাদন এবং তাঁর হাত ধরেই শুরু হওয়া রোবট ও অটোমেশনের যুগ, যা মানুষের কায়িক শ্রম হ্রাস করে যন্ত্রকে পরিণত করেছিল মানুষের দাসে।

আরো পড়ুন – এমন ভাবে হত্যা করতে হবে যাতে শিশুদের রক্ত ছিটকে গিয়ে তার মুখের উপর পরে! ৮০০ নিষ্পাপ শিশুর হত্যাকারী ফরাসি সৈনিক গিলেস ডি রাইস

তবে এই বিদ্যুৎ মানবের তৈরি করা সব আবিষ্কার যে বাস্তবের মুখ দেখেছিল সেটা কিন্তু নয় এবং কেন দেখে নি তার পিছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। এই রকমই বাস্তবের মুখ না দেখা নিকোলা টেসলার কয়েকটি আবিষ্কার হল-

ভূমিকম্প যন্ত্র

টেসলা ১৮৯৩ সালে একটি বাষ্প-চালিত যান্ত্রিক অসিলেটর পেটেন্ট করেছিলেন যা উপরে উচ্চ গতিতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে এবং নীচে কম্পন সৃষ্টি করবে।
এরপর কয়েক বছর পর তিনি তাঁর আবিষ্কার নিয়ে মুখ খুলেছিলেন সাংবাদিকদের সামনে, তিনি বলেছিলেন যে একদিন তিনি তার যান্ত্রিক অসিলেটরটি সাথে নিউ ইয়র্ক সিটির গবেষণাগারে থাকা বিল্ডিংয়ের কম্পনের সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন যার ফলে সেই সময় ভূমি কেপে উঠছিল।

এই পরীক্ষাটি করার সময় তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে তাঁর আশেপাশে থাকা জিনিসপত্র নড়তে শুরু করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় আশেপাশের বিল্ডিং গুলোতেও ভূকম্পন অনুভূত হয়।

ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার ফলে মানুষের হট্টগোল লেগে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ, এম্বুলেন্স সেখানে চলে আসে। সেই সময় তিনি এই বিষয়টি পুরোপুরি চেপে যান এবং তার সহকারীদের চুপ থাকতে বলেছিল। এরপর তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন যে এটি অবশ্যই একটি ভূমিকম্প ছিল।

পরে তিনি নিজের আবিষ্কার করা এই যন্ত্রটি নিজেই হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেন। কারণ এই এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে গোটা পৃথিবীতেই ভূমিকম্প সৃষ্টি করা সম্ভব হত যা কেবল ধ্বংসই করত। তিনি মানব জাতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার আবিষ্কারকে নিজে হাতে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।

চিন্তা রেকডিং করা ক্যামেরা

আচ্ছা ভাবুন তো যদি আমাদের চিন্তা ক্যামেরায় রেকডিং করা যেত তাহলে কেমন হত। ভাবছেন তো তা আবার সম্ভব নাকি। সম্ভব কি সম্ভব নয় সেটা আলাদা বিষয়, কিন্তু এটা সত্য যে এই ধারণার বিকাশ ঘটেছিল ১৮৯৩ সালে। টেসলা নিজের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সময় ‘থট ক্যামেরা’-র তৈরির কথা ভেবেছিলেন। এরপর দীর্ঘকাল পরে টেসলা এই বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করেছিলেন।

এক সাক্ষাৎকারে টেসলা বলেছিলেন যে, ” সে নিশ্চিত যে মানুষের চিন্তা-ভাবনার ছবি চোখের মণিতে ফুটে ওঠে।’’ টেসলার এই কথায় বিশ্বাস করে নেওয়া হলেও প্রশ্নটা হল যে কীভাবে সেই ছবি ক্যামেরাবন্দি করা যাবে? তখন তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন যে ‘‘প্রতিবর্ত ক্রিয়ার দ্বারাই মানুষদের চিন্তা-ভাবনার ছবি মণিতে দেখা যায়। আর সেই ছবি যথাযথ যন্ত্রের সাহায্য দেখা সম্ভব”।

কী এই যন্ত্র? এই সময় উঠে এসেছে টেসলারের ‘থট ক্যামেরা’র প্রসঙ্গ। তিনি বলেছিলেন যে মানুষের চোখের মণিতে ভেসে ওঠা মনের ভাবনার প্রতিচ্ছবি একটি কৃত্রিম অক্ষিপটে (রেটিনায়) ফেলে তার ছবি তোলা যায়। ‘থট ক্যামেরা’ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন যে মানুষের মনের ছবি যদি এই ভাবে পর্দায় ভাসিয়ে তোলা যায়, তাহলে সেই মানুষটি কী চিন্তা-ভাবনা করছেন সেটিও সহজেই জেনে ফেলা যাবে।’’

অনেক দাবি করেন যে ‘থট ক্যামেরা’-র কথা ভেবেছিলেন টেসলা ১৮৯৩ সালে আবার অনেক দাবি করেন যে গত শতকের তিরিশের দশকে ভেবেছিলেন ‘থট ক্যামেরা’-র কথা। ‘থট ক্যামেরা’-র কথা কবে ভেবেছিলেন টেসলা তার সাল-তারিখ নিয়ে রয়েছে মতপার্থক্য। এই ক্যামেরার সাহায্যে মানুষের মনের চিন্তা-ভাবনার ছবিও স্লাইডশোয়ের মতো দেখা যাবে। তাই এটা মেনে নিতে কোনো দ্বিমত নেই যে টেসলারের এই উদ্ভাবনী চিন্তা সত্যি অভূতপূর্ব ছিল। টেসলারের কথা অনুযায়ী, ‘‘এই ধরনের ক্যামেরার সাহায্যে প্রতিটি মানুষের মনের কথা পড়ে ফেলা যাবে। যার ফলে মানুষের মন আক্ষরিক অর্থেই খোলা বইয়ের আকার নেবে। যা সকলেই পড়তে পারবেন।’’ তবে টেসলার এই ভাবনা সাফল্যের মুখ দেখতে পায় নি।

তারবিহীন বিদ্যুৎ

যেই সময় মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল বিদ্যুৎ এর রহস্য ভেদ করা সেই সময় বিদ্যুৎকে নিয়ন্ত্রণ করা ছিল তার হাতের মুঠোয়। এই বিদ্যুৎ মানব ওই সময় দাড়িয়ে চেয়েছিলেন শহরের মানুষকে তারবিহীন বিদ্যুৎ এর পরিষেবা দিতে।

টেসলা ১৯০১ সালে আমেরিকান অর্থলগ্নিকারী জেপি মরগানের থেকে ১,৫০,০০০ মার্কিন ডলার নিয়েছিলেন লং আইল্যান্ডের উত্তর তীরে একটি ১৮৫ ফুট লম্বা, মাশরুম আকৃতির টাওয়ার নির্মাণ করার জন্য। তিনি এই আবিষ্কারের সাহায্যে চেয়েছিলেন বাতাসের মাধ্যমে পুরো শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে। তবে এই টাওয়ারের নির্মাণ করার সময় মাঝ পথে বন্ধ করে দেন মর্গান অর্থ দেওয়া। কারণ যারা ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরবরাহ করতো তারা এই বিদ্যুৎ প্রচুর দামে বিক্রি করত জনগণের কাছ এবং সেখান থেকে প্রচুর মুনাফা অর্জন করতো।

আর টেসলার এই প্রজেক্ট যদি সফলতার মুখ দেখে তাহলে তাদের ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই করনে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে টেসলার অর্থের যোগান বন্ধ করে দিয়েছিল তারা।

১৯০৬ সালে টেসলা এই প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছিলেন তবে কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই কাজ। টেসলার তারবিহীন বিদ্যুৎ এর ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ার ১৯১৭ সালে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।

কৃত্রিম জোয়ার ঢেউ

টেসলা মনে করতেন যে বিজ্ঞানের শক্তি যুদ্ধ প্রতিরোধের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

১৯০৭ সালে প্রকৌশলী তথা পদার্থবিদ নিকোলা টেসলা একটি সামরিক উদ্ভাবনের বিষয়ে তথ্য দিয়েছিলেন, যেখানে বলেছিলেন যে ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি সমুদ্রে উচ্চ বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে যার ফলে সৃষ্টি হবে বিশাল জোয়ারের তরঙ্গ যা ধ্বংস করে দেবে শত্রুর সমস্ত নৌবহরকে।

এছাড়াও আরো জানা যায় যে এই কৃত্রিম জলোচ্ছ্বাস একটি কাগজের নৌকার মতো অকেজো করে দেবে নৌবাহিনীকে। সেই সক্ষমতা থাকবে এই কৃত্রিম জলোচ্ছ্বাসে।

তবে ওই সময় টেসলারের এই প্রজেক্টটি কোনো কাজে লাগবে না’ বলে বাতিল করে দিয়েছিলেন মার্কিন নৌবাহিনীর গবেষণা প্রধান টমাস আলভা এডিসন। যার ফলে আর বাস্তবের মুখ দেখেনি টেসলারের এই আবিষ্কারটি। তবে পরবর্তীকালে অর্থাৎ ১৯৩০-এর দশকে একই নীতিতে রাডার (জঅউঅজ) উদ্ভাবন করেছিলেন এমিলি গিয়ারডিউ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

বাংলার ভূস্বামী বিদ্রোহ (প্রথম পর্ব)বাংলার ভূস্বামী বিদ্রোহ (প্রথম পর্ব)

রানা চক্রবর্তীঃ বিনা যুদ্ধে আকবরের হাতে বাংলা ও বিহার সঁপে দিয়ে ‘দাউদ কররানি’ যখন উড়িষ্যায় চলে গিয়েছিলেন তখন তিনি নিজের পিছনে এক বিরাট শূন্যতা ছেড়ে গিয়েছিলেন। সে যুগের সব দেশের

বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিনবিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিন

এটাই সেই ইঞ্জিন; ১ লাখ ৯ হাজার হর্সপাওয়ার শক্তি-সম্পূর্ণ Wartsila sulzer RTA96-C বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিন! ● নির্মাতা কোম্পানি: Built in Finland ● এটার ওজন ২,৩০০টন এবং ৪৪-ফুট

‘পুরানো কলকাতার একটি মুদির দোকান’‘পুরানো কলকাতার একটি মুদির দোকান’

রানা চক্রবর্তীঃ ১৯৪০-এর দশকে কেউ যদি সর্বদেশীয় মেয়েদের নামের মিলন যদি দেখতে চাইতেন, তাহলে তাঁর পুরানো কলকাতার একটি ষ্টীমার ঘাটে গেলেই চলত। সেখানে তখন থরে থরে গঙ্গার বুকের উপরে বাড়ির

গৌড়ের প্রথম ধারাবাহিক শাসক-বংশগৌড়ের প্রথম ধারাবাহিক শাসক-বংশ

রানা চক্রবর্তীঃ হানাহানি ও রক্তপাতের সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে গৌড়-বঙ্গ কিভাবে প্রথম নিজের ধারাবাহিক শাসক-বংশ পেয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে ইতিহাসের পথে অনেকটা পিছনের দিকে হাঁটতে হবে। বখতিয়ার খিলজির