সায়নদীপঃ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার একটি শহর শ্যামনগর। নবদ্বীপ রাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বের মধ্যে থাকা এই অঞ্চল পূর্বে মূলাজোড় নামে পরিচিত ছিল। এখানকার প্রধান দর্শনীয় ধর্মীয় স্থান ৺ শ্রীশ্রী ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির। কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার জমিদার রাজা গোপীমোহন ঠাকুর মুলাজোড় গ্রামে এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ১৮০৯ সালের বৈশাখী পূর্ণিমায়
শোনা যায়, গোপীমোহন ঠাকুরের একমাত্র কন্যা ব্রহ্মময়ীর বিবাহ স্থির হয় আট বছর বয়সে। বিবাহের দিন সকালে, আহিরীটোলা গঙ্গার ঘাটে ব্রহ্মময়ী কে নিয়ে যাওয়া হয় স্নানের জন্য। পালকি সহ তাকে গঙ্গায় ডোবানো হলে তলিয়ে যায় ব্রহ্মময়ী । কন্যা বিয়োগের শোকে মুহ্যমান গোপীমোহন ঠাকুর রাত্রে স্বপ্নাদিষ্ট হন । মা কালী স্বয়ং স্বপ্নে তাকে বলেন যে, মুলাজোড়ে গঙ্গার পাড়ে তার মেয়ে ব্রহ্মময়ীর দেহ পাওয়া যাবে এবং সেখানেই যেন তিনি মাতৃ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন
সেইমতো পরদিন সকালে মুলাজোরে গঙ্গার তীরে গোপীমোহন কন্যা ব্রহ্মময়ী র দেহ খুঁজে পাওয়া যায় এবং পার্শ্ববর্তী স্থানেই একটি পাষাণ নির্মিত কালী মূর্তি পশ্চিমাস্য রূপে মাটিতে প্রোথিত অবস্থায় দণ্ডায়মান ছিল। সেই স্থানেই এক নবরত্ন মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন জমিদার এবং উক্ত কালীমূর্তি স্থাপন করা হলো পশ্চিমাস্য রূপেই। নিজ কন্যার নামে মায়ের নামকরণ হল ব্রহ্মময়ী । কালী মন্দিরের দুই পাশে 6 টি করে মোট 12 টি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিব মন্দির গুলির মধ্যে দশটি আটচালা এবং দুটি পঞ্চরত্ন ধাঁচে গঠিত । শিব মন্দির গুলির নির্মাণকার্য শেষ করেন গোপীমোহন ঠাকুরের ছেলে প্রসন্নকুমার ।
পরবর্তীকালে পাথুরিয়াঘাটা জমিদারবাড়ির কুলদেবতা গোপীনাথ কে এই কালী মন্দিরের পাশেই পৃথক মন্দির নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠা করা হয় । মন্দিরগুলিতে টেরাকোটার কাজ না থাকলেও গঙ্গার তীরে গাছপালা বেষ্টিত স্থানটি অত্যন্ত মানসিক শান্তিদায়ক। কালীমন্দির সম্মুখস্থ বৃহৎ নাটমন্দির ও একজোড়া শ্বেত পাথর মর্মর সিংহ মন্দিরের শোভাবর্ধন করছে ।
স্থানটির নাম মূলাজোড় হওয়ার কারণে জোড়া মুলো দিয়ে মাকে পুজো দেওয়ার প্রথা এখানে প্রচলিত । প্রতিবছর পৌষে মাসব্যাপী এখানে মেলা বসে । দেশ-বিদেশের বহু পুণ্যার্থীর ঢল দেখা যায়.