হাত নেই তাতে কী! পায়ে দিয়ে লিখেই মাধ্যমিক পাশ বর্ধমানের জগন্নাথ - Ei Bangla
Ei Bangla পশ্চিমবঙ্গ হাত নেই তাতে কী! পায়ে দিয়ে লিখেই মাধ্যমিক পাশ বর্ধমানের জগন্নাথ

হাত নেই তাতে কী! পায়ে দিয়ে লিখেই মাধ্যমিক পাশ বর্ধমানের জগন্নাথ


এইবাংলা ডেস্কঃ অসম্পূর্ণ হাত নিয়ে জন্মানো ছেলেকে ছেড়ে চলে গেছেন মা। ঠাকুমা ও পিসি তিল তিল করে বড় করেছেন সেই ছেলেকে। দুই হাত না থাকায় নাম রেখেছিলেন জগন্নাথ। খর্বকায় হাতে নেই তালু, নেই আঙুলও। তাতেও দমে যায়নি সে। এবার সেই ছেলেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পা দিয়ে লিখেই এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার ব্যাপারেও দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিল জগন্নাথ। আর সেটাই হয়েছে। শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর জগন্নাথ জানতে পারে সে ২৫৮ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। বিশেষ ভাবে সক্ষম গরিব আদিবাসী পরিবারের এক ছাত্রের এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে অন্যরা।

আরো পড়ুন- শ্যামনগর মূলাজোড় শ্রী শ্রী ব্রহ্মময়ী কালী মন্দিরের অজানা মাহাত্ম্য

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জগন্নাথ মাণ্ডির বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারির সিমলা গ্রামের আদিবাসী পাড়ায়। তাঁর শৈশব জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মেছে জেনে ছোট বেলাতেই তাঁকে ছেড়ে চলে যায় মা। তবে মা ছেড়ে চলে গেলেও বাবা, বৃদ্ধা ঠাকুমা এবং পিসি ও দাদার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়নি জগন্নাথ। এঁদের পরম স্নেহে জগন্নাথ লালিত পালিত হয়। এঁরাই লেখাপড়া র প্রতি জগন্নাথকে ছোট বয়স থেকেই আগ্রহী করে তোলেন। ভর্তি করেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তখন থেকেই পা দিয়ে বাংলায় লেখা রপ্ত করতে শরু করে জগন্নাথ । সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জগন্নাথ পা দিয়ে লেখাতে সাবলীল হয়ে ওঠে।

জগন্নাথ মাণ্ডি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সম্পূর্ণ হলে পরিবারের লোকজন জগন্নাথকে ভর্তি করে মেমারির নুদীপুর ভূপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরে। সেখানে একের পর এক ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। জগন্নাথই ছিল সিমলা আদিবাসী পাড়া থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া একমাত্র ছাত্র। তাই জগন্নাথের মত পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য সব রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পরীক্ষাকেন্দ্র মেমারির বাগিলা পূর্ণচন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের পরীক্ষকরা।

শুক্রবার রেজাল্ট বের হওযার পর নুদীপুর ভূপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের শিক্ষকরাও জগন্নাথের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধান শিক্ষক কিশোর ঘোষাল বলেন, ‘জগন্নাথ খুব ভালো ছেলে। লেখাপড়ার ব্যাপারেও ও খুব সচেতন। ওর ব্যবহার মুগ্ধ করে স্কুলের সকল শিক্ষক ও সহপাঠীদের।’ তিনি আরও বলেন, ‘জগন্নাথ গরিব পরিবারের ছেলে। লেখাপড়া শেখার ব্যাপারে ছোট বয়স থেকেই ওর বৃদ্ধা ঠাকুমা ওকে অনুপ্রাণিত করে যান। সেই প্রেরণায় শত কষ্টের মধ্যেও জগন্নাথ লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এ বছর এক বারেই মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিযে গেল। পায়ে চামচ নিয়ে স্কুলে মিড ডে মিল খাওয়া জগন্নাথ।’

বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের কথায়, ভালো ফুটবল খেলার পাশাপাশি জগন্নাথ পা দিয়ে খুব ভালো ছবিও আঁকে। তাঁর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে স্কুলে ক্লাস করা ও লেখালেখির জন্য স্কুলের তরফে বিশেষ বেঞ্চের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। স্কুলে সহপাঠীরা সবসময় জগন্নাথের পাশে থাকত। বেশিরভাগ দিন সহপাঠীরা তাঁদের সাইকেলে জগন্নথকে চাপিয়ে নিয়ে স্কুলে আসত। প্রধান শিক্ষক আরও জানান, পায়ে লিখে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জগন্নাথ যাতে অতিরিক্ত সময় পায় তার জন্য পর্ষদে আবেদন জানানো হয়েছিল। পর্ষদ তা অনুমোদনও করে’।

সিমলা গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ সাঁতরা বলেন,“জগন্নাথ আমাদের গ্রামের ছাত্র ছাত্রীদের কাছে প্রেরণা। তাই পরীক্ষার ক’টা দিন আমি ওকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। জগন্নাথ যে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল সেই বাগিলা পূর্ণচন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা অনন্যা তরফদার খুশি হয়েছেন জগন্নাদ পাস করেছে জেনে । তিনি এদিন বলেন, “পা দিয়ে জগন্নাথ এত সুন্দর করে পরীক্ষার খাতায় লিখছে, যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা দায়। পা দিয়ে লেখাও যে এত সুন্দর হয় এবং কেউ পা দিয়ে উত্তরপত্রে এত গুছিয়ে লিখতে পারে সেটা জগন্নাথকে দেখেই আমরা জানতে পারি। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এই ছাত্র যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা সত্যি গর্বের।”

অন্যদিকে অনন্য এই কৃতিত্ব অর্জনকারী জগন্নাথ নিজে বলেছে, ‘প্রতিদিন যখনই সময় পেতাম পড়তে বসতাম। অন্য ছাত্রদের মত একাধিক সাবজেক্টে প্রাইভেট টিউটর নেওয়ার সামর্থ আমার ছিল না। মাত্র একজন প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তে যবার সৌভাগ্য কোনও রকমে হয়েছিল। স্কুলের শিক্ষকরাই আমাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছেন। কষ্ট যাইহোক, আগামী দিনেও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই।’
জগন্নাথের ঠাকুমা মুঙ্গলী মাণ্ডি ও পিস রিবি মুর্মুরা বলেন, ”জগন্নাথ লেখাপড়া শিখে ও প্রতিষ্ঠিত হোক ,মানুষের মত মানুষ হোক এটাই আমরা চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

ডিএ-র দাবিতে ডাকা ধর্মঘট পুরোপুরি ব্যার্থ, স্বতঃস্ফূর্ত হাজিরা সরকারি কর্মীদেরডিএ-র দাবিতে ডাকা ধর্মঘট পুরোপুরি ব্যার্থ, স্বতঃস্ফূর্ত হাজিরা সরকারি কর্মীদের

বকেয়াে ডিএ-র দাবিতে ডাকা ধর্মঘটে তেমন সাড়া মিলল না। আজ, শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ধরা পড়ল প্রতিদিনের চেনা ছবিটাই। সূত্রের খবর, কেএমডিএ, পূর্ত ভবনে প্রায় ১০০ শতাংশ হাজিরা ছিল

বিশ্বভারতীর উপাসনা গৃহে ‘রাজনৈতিক’ কথা, উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে প্রাক্তনী থেকে আশ্রমিরাবিশ্বভারতীর উপাসনা গৃহে ‘রাজনৈতিক’ কথা, উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে প্রাক্তনী থেকে আশ্রমিরা

বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী উপাসনা গৃহে বসে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলেছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী থেকে আশ্রমিকরা। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এবার আচার্য অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি

এক বাইকে ১০ জন! দুর্গাপুরে ছোটনের মোটরসাইকেল ঘিরে উৎসাহএক বাইকে ১০ জন! দুর্গাপুরে ছোটনের মোটরসাইকেল ঘিরে উৎসাহ

সাধারণ ভাবে একটি মোটরবাইকে (Motor Bike Model) সর্বাধিক দুজন বসতে পারেন, নিদেন পক্ষে তিনজন বসার দৃশ্যও অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু এই বাইকে একসঙ্গে বসেন পারেন ১০ জন । আরো পড়ুন- দিদির

বাংলার মুকুটে নয়া পালক! দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সেরা বাংলাবাংলার মুকুটে নয়া পালক! দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সেরা বাংলা

বাংলার মুকুটে নয়া পালক। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সেরা পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুত্‍ উন্নয়ন নিগম। ‘রাজ্যের জন্য খুবই গর্বের বিষয়’, টুইট করলেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশে যতগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা রয়েছে, তার মধ্যে সেরার তকমা