বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের প্রান দিতে পর্যন্ত পিছপা হননি! কে ছিলেন আমস্টারডামবাসী এই আব্রাহাম? - Ei Bangla
Ei Bangla ব্লগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের প্রান দিতে পর্যন্ত পিছপা হননি! কে ছিলেন আমস্টারডামবাসী এই আব্রাহাম?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের প্রান দিতে পর্যন্ত পিছপা হননি! কে ছিলেন আমস্টারডামবাসী এই আব্রাহাম?


নিজের দেশের জন্য লড়েছে এমন বহু বীরদের কথা উল্লেখিত রয়েছে ইতিহাসে। কিন্তু একজন অন্য দেশের নাগরিক হয়েও সম্পূর্ণ ভিন্ন দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু ভিন্ন দেশের নাগরিক হয়েও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে এক অনন্য নজির গড়েছিলেন উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড নামের এক ব্যক্তি।

সময়টা ছিল ১৯১৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর। হল্যান্ডের আমস্টারডামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সাইমন। যদিও পিতৃপরিচয় অনুযায়ী তার আসল দেশ ছিল অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। তার জন্মের সময় দেশ জুড়ে চলছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এক কথায় বলাই যায় যে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই জন্মেছিলেন সাইমন। এরপর শৈশবকাল অতিক্রম করে মাত্র ছয় বছর বয়সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেছিলেন তিনি।

তবে অল্প বয়সে শিক্ষা লাভ করলেও মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাকে সমস্ত পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল পরিবারের চাপে। আর্থিক স্থিতি ভালো না থাকায় একটি কোম্পানিতে জুতো পালিশের কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন সাইমন। ১৯৩৪ সালে জীবনের প্রথম কাজে ঢুকেছিলেন তিনি।

পরবর্তীকালে জুতো পালিশের কাজ মাত্র কয়েক মাস করে ওই বছরই বাটা কোম্পানিতে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। এরপর সেখানে টানা দুবছর কাজ করে ১৯৩৬ সাল নাগাদ জার্মানি ও নেদারল্যান্ড যুদ্ধ শুরু হতেই সামরিক বাহিনীতে নাম লিখিয়েছিলেন সাইমন। সামান্য একজন সৈনিক থেকে তার পদোন্নতি হয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি রয়্যাল সিগনালে সার্জেন পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। সাইমনের আন্ডারে ছিল প্রায় ৩৬ জন সৈনিক। এভাবেই সমাপ্ত হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাইমনের অবদান।

১৯৩৯ সালে যখন ফের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন ওলন্দাজ বাহিনীর গেরিলা কমান্ডো হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে নেমেছিলেন সাইমন। সেই যুদ্ধ চলাকালীন হিটলারের নাৎসি বাহিনী ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানি দখল করতে শুরু করেছিল তখন গ্রেফতার হয়েছিলেন সাইমন। তবে নিত্য নতুন কাজ ছাড়ার মতোই বেশিদিন জেলে আটক থাকতে পারেননি তিনি। জেল থেকেও একসময় পালিয়ে গিয়েছিলেন। যেহেতু তিনি ওলন্দাজ ও জার্মানি ভাষা জানতেন তাই জার্মান ফেরত সৈন্যদের ও দাসদের আড়ালে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শিক্ষা দিতেন সাইমন। এক কথায় প্রতিরোধক আন্দোলনের গুপ্তচর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তবে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতেই পুনরায় ষাটের দশকে আবার বাটা কোম্পানিতে যুক্ত হয়েছিলেন।

সেই সময় বাটা কোম্পানির বেশ কয়েকটি অফিসের কাজের জন্য অনেকগুলি দেশে ঘুরেছিলেন। এরপর প্রায় ১৯৭০ সালের শেষের দিকে বাটা কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি দিয়েছিলেন সাইমন। সেখানে কিছুদিন কাজ করে ঢাকায় চলে এসেছিলেন তিনি। এই সময়টার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ঢাকায় প্রচুর পরিমাণে বাটার জুতোর চাহিদা উঠেছিল। যেমন জুতোর চাহিদা ছিল ঠিক সেরকমই সাইমনের বুদ্ধির জোরে বাটা কোম্পানি দেশের আরো নানান কোনায় প্রচার করতে শুরু করেছিল। এছাড়াও সাইমনের একটা ভাল দিক ছিল যে কোম্পানির নাম হলে সে নিজের ক্রেডিট কোনদিন দিত না, তিনি বলতেন সকল কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ কোম্পানির নাম শিখরে উঠেছে। সেই কারণেই পূর্ব পাকিস্তানের বাটা কোম্পানির সকল কর্মীরা সাইমনকে খুবই স্নেহ করতেন। পূর্ব পাকিস্তানে নাম করার পর বাংলাদেশের ঢাকায় প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কোম্পানির উন্নতির জন্য এসেছিলেন সাইমন। প্রথমে প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কোম্পানিতে যুক্ত হলেও পরবর্তীকালে নিজের কাজের জন্য পদোন্নতি করে নির্বাহী পরিচালক হয়েছিলেন তিনি। বাটা কোম্পানির অধীনস্থ ভালোই সময় কাটছিল সাইমনের। কিন্তু হঠাৎই সময় বদলে গেল ১৯৭১ সালে।

১৯৭১ সালের ১লা মার্চ ভুট্টোর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা করে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। প্রেসিডেন্টের এই ঘটনার ফলে রীতিমতো ক্ষেপে আন্দোলনের নেমেছিলেন পাকিস্তানবাসীরা। পাকিস্তানে উশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সঙ্গে শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনও। এই আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল টাঙ্গীর বাটা কোম্পানিতেও। সময়টা ছিল ৫ই মার্চ, সেদিন গাজীপুরের টাঙ্গী শহরে মেঘনা টেক্সটাইল মিলের সামনে জনতা ও কর্মীদের একত্রে শুরু হয়েছিল তীব্র তান্ডব। আর সেই বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনের নির্দেশে গুলি চালিয়েছিলেন ইপিআর। আর সেই গুলির ঝড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিলেন ৪জন এবং আহতর সংখ্যা ছিল ২৫।

যেহেতু সাইমন নিজে একজন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ছিলেন তাই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হতেই পাকিস্তানি হানাদারেরা যেভাবে নৃশংস নির্যাতন শুরু করেছিলেন সেটি দেখে আর চুপ করে বসে থাকতে পারেননি তিনি। তার সামনেই এত গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল যে একসময় সকলকে লুকিয়ে পাকিস্তানী হানাদারীদের এই নৃশংসতার ছবি তুলে বহিঃবিশ্বের নানা জায়গায় পাঠিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে ছবি তুলে বেশ কয়েকজনকে তিনি সাহায্য করলেও পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্বয়ং যুদ্ধে নামার।

দ্বিতীয় খণ্ড খুব শীঘ্রই প্রকাশ পাবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

অপারেশন আইভার! দেশের স্বার্থে নিজেদের এজেন্টদেরকেও হত্যা করতে পিছপা হয়না ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাঅপারেশন আইভার! দেশের স্বার্থে নিজেদের এজেন্টদেরকেও হত্যা করতে পিছপা হয়না ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা

সময়টা ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বর মাসের কোন একদিন দুপুরবেলা, পূর্ব ভূমধ্যসাগরের উপর দিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে একটি কার্গো বিমান। আপাতদৃষ্টিতে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও বিষয়টি মোটেও স্বাভাবিক

বাংলা সাহিত্যের বটগাছ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীবাংলা সাহিত্যের বটগাছ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

শুধু অসাধারণ সাহিত্য সৃষ্টিই কি একজন সাহিত্যকারের মাপকাঠি। স্বয়ং ভাষার কাছেও তার দায় যে অপরিসীম। আসলে এমন বহু প্রিয় এবং বিশিষ্ট সাহিত্যকার আছেন যারা তাদের লিখনশৈলী এমন তারে বেঁধেছেন যা

‘ইউরোপীয়দের চোখে পাল্কী’‘ইউরোপীয়দের চোখে পাল্কী’

রানা চক্রবর্তীঃ ইউরোপীয়দের দৃষ্টিতে পাল্কী নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শুরুতেই একটি কাহিনী কল্পনা করা যাক। আঠারো শতকের কলকাতা। নবাগত এক ইংরেজ-নন্দন জাহাজ থেকে নেমে চৌরঙ্গীতে এসে দাঁড়ালেন। তারপরে নেশার ঘোরে

গৌড়ের প্রথম ধারাবাহিক শাসক-বংশগৌড়ের প্রথম ধারাবাহিক শাসক-বংশ

রানা চক্রবর্তীঃ হানাহানি ও রক্তপাতের সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে গৌড়-বঙ্গ কিভাবে প্রথম নিজের ধারাবাহিক শাসক-বংশ পেয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে ইতিহাসের পথে অনেকটা পিছনের দিকে হাঁটতে হবে। বখতিয়ার খিলজির