বর্ধমানঃ টোল ট্যাক্স আদায়ের কাউন্টারে দুষ্কৃতী হামলা। টোলের কর্মীদের ব্যাপক মারধর করে আড়াই লক্ষাধিক টাকা লুট করে টোল ট্যাক্স আদায়ের দুটি অফিসে আগুন ধরিয়ে দিল এক দল দুষ্কৃতী। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের (Burdwan) খণ্ডঘোষের শশঙ্গা অঞ্চলে। মারধরের ঘটনায় জখম কমপক্ষে ৬ জন। গুরুতর জখম অবস্থায় এক টোল কাউন্টারের কর্মীকে চিকিৎসার জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের খন্ডঘোষ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে। টোল কাউন্টারে লুটপাট চালানো ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে কি কারণ তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত টোল কাউন্টারের মালিক ফিরোজ হোসেন বলেন, বালির গাড়ি থেকে এক বছর টোল আদায়ের জন্য খণ্ডঘোষের শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমা দেওয়ার দিন নির্দিষ্ট করে। তিনটি জায়গায় টোল কাউন্টার বসানোর জন্য তিনি ৪ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা দরপত্র দিয়ে পঞ্চায়েত থেকে টোল আদায়ের জন্য মনোনীত হন। চলতি বছরের ৩ মার্চ পুরো টাকাটা পঞ্চায়েত অফিসে জমা দিয়ে তিনি টোল আদায়ের অনুমতি পত্র হাতে পান। টোল আদায়ের জন্য জনা কুড়ি পঁচিশ ছেলেকে তিনি নিয়োগ করেছেন। কর্মীদের থাকা, খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য টোল কাউন্টার গুলির কাছে অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছে। ফিরোজ হোসেনের অভিযোগ, এদিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ তার দুটি টোল কাউন্টার অফিসে এলাকার একদল দুষ্কৃতী চড়াও হয়। টোল কাউন্টারে থাকা কর্মীদেরকে ব্যাপক মারধর করে, তাদের তিনটে বাইক ভাঙচুর করে। এমনকি কর্মীদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন, আই ফোন গুলিও কেড়ে নেয়। কর্মীদের থাকার দুটি ঘরে ঢুকে গিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালায়। গত দুদিন টোল থেকে সংগৃহীত টোল অফিসে থাকা ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দুষ্কৃতীরা লুট করে নিয়ে চলে গেছে বলে ফিরোজ হোসেন তার অভিযোগে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ফিরোজ বাবু বলেন দুষ্কৃতী হামলার খবর পেয়েই খন্ডঘোষ থানার পুলিশ ঘটনাচলে পৌঁছে দু তিনজন অভিযুক্তকে আটক করেছে। এই ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবেন বলে ফিরোজ হোসেন জানিয়েছেন।
যদিও এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পঞ্চায়েত থেকে টোল আদায়ের ছাড়পত্র পাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই ফিরোজ হোসেন লোকজন লাগিয়ে বাড়ির গাড়ি থেকে টোল আদায় করা শুরু করে দিয়েছিল। এই কাজে তিনি এলাকার কিছু দুষ্কৃতীদের সহায়তা নিয়েছিলেন। পরে ছাড়পত্র পাওয়ার পর ওইসব দুষ্কৃতীদের আর পাত্তা না দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ ছিল। এদিনের ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রকাশ ঘোষ বলেন, ঘটনার কথা শুনেছি। যা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। প্রকাশ বাবু বলেন, এদিন হোলি উপলক্ষে এলাকার কিছু মদ্যপ দুষ্কৃতি টোল কাউন্টার গুলিতে গিয়ে টাকা দাবি করে। তা নিয়ে অশান্তি বাঁধে। ওই সময় দুষ্কৃতি দল টোল কাউন্টারের অফিসে হামলা ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে তিনি জানতে পেরেছেন। ছাড়পত্র পাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে ফিরোজ হোসেন। লোকজন লাগিয়ে টোল আদায় করছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে সেই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধান প্রকাশ ঘোষ বলেন, ইজারাদার একাধিক একাউন্ট থেকে লিজের ৪ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা মিটিয়েছিল। সেটা যেহেতু নিয়মবহির্ভূত তাই তাকে তখন ছাড়পত্র না দিয়ে টোল আদায় করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে নিয়ম মেনে ইজারাদার তার নিজস্ব নামের তহবিল থেকে লিজের পুরো টাকাটা পঞ্চায়েতে জমা করলে তারপর তাকে টোল আদায়ের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এই দিনের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হচ্ছে বলে প্রধান জানিয়েছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পত্র জমা পড়লে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।