মানুষ হতো বুনো শুকরের খাবার, প্রাচীন রোমের পাঁচটি জঘন্য অত্যাচার - Ei Bangla
Ei Bangla ব্লগ মানুষ হতো বুনো শুকরের খাবার, প্রাচীন রোমের পাঁচটি জঘন্য অত্যাচার

মানুষ হতো বুনো শুকরের খাবার, প্রাচীন রোমের পাঁচটি জঘন্য অত্যাচার


শাস্তি ঠিক কতটা ভয়ানক হতে পারে তা যদি আপনারা প্রাচীন রোমে শাস্তি কথা না জানেন তাহলে জানতেই পারবেন না। এই সাম্রাজ্যে এমন কিছু শাস্তির প্রচলন ছিল যা শুনলে শিউরে উঠবেন আপনারা। এই রকম প্রাচীন রোমে প্রচলিত কয়েকটি ভয়ানক শাস্তি হল-

১. মৌমাছির আক্রমণ

মৌমাছি দ্বারা নির্যাতন করা হত অপরাধীকে। এর জন্য প্রথম অপরাধীকে উলঙ্গ করে বড়সড়, ফাঁকা ফাঁকা করে বোনা বিশেষ একধরনের ঝুড়িতে ঢুকিয়ে দেওয়া হত। তারপর সেই ঝুড়িটি এমন গাছের শাখায় ঝুলিয়ে দেওয়া হত যার আশেপাশে বড় কোনো মৌচাক থাকত। এর ফলে মৌমাছিরা ওই ব্যক্তিটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। হুলের যন্ত্রণায় একসময় ওই ব্যক্তি মারা যেত।

২. মানুষকে তরবারি দিয়ে কুঁচিকুঁচি করে ফেলতো .

সামাজিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে মানুষকে মর্যাদা দেওয়ার এই বিষয়টি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।

আর এই ধারাবাহিকতার বাইরে ছিল না প্রাচীনকালের রোম সাম্রাজ্যও। বলা যেতে পারে যে এই সাম্রাজ্যে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অর্থাৎ বিত্ত-বৈভব এবং ক্ষমতার দিক থেকে যার অবস্থান যত উপরে, সেই ব্যক্তি তত বেশি জবাবদিহিতার উর্ধ্বে থাকতেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে যে, সম্রাটকে  কারো কাছেই তার কাজের জন্য কৈফিয়ত দিতে হত না। সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল ক্ষমতা বিস্তৃত ছিল তার বাহিনীর অন্যান্য অধস্তন কর্মকর্তা ও সাধারণ জনগণের উপর,  তাদের কাছে সে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য থাকত না। অন্যদিকে আবার  একজন সাধারণ সৈনিক কেবল সাধারণ জনগণের উপর ক্ষমতাবান ছিলেন,  তাদের নিকট  সে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য ছিল না।

ওই সাম্রাজ্যে এই সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী স্তরবিন্যাসকে কঠোরভাবে মেনে চলতে হতো। যদি কোন সাধারণ নাগরিক একজন সৈনিককে টপকে যাওয়ার প্রচেষ্টা করত, তাহলে সেই নাগরিককে জনতার সামনে খোজা করে ছেড়ে দেওয়া হতো। আবার যদি একজন সৈনিক সেটাকে স্বেচ্ছায় মেনে নিত তাহলে তাকে জনতার সামনে পেট কেটে তার নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলা দেওয়া হত।

৩. যৌনাঙ্গ বেঁধে ফেলা

প্রাচীন রোমে ঘৃণিত সম্রাট গুলির মধ্যে অন্যতম একজন হল টাইবেরিয়াস। তার ভয়ে সবসময় মানুষজন তটস্থ হয়ে থাকত। এর পেছনের কারণ গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল তার তিরিক্ষি মেজাজ। মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তার মাথায় সবসময় নানা রকম আজগুবি চিন্তা-ভাবনা, নিত্যনতুন উপায় ঘুরঘুর করত।

একবার এক বলিদানের অনুষ্ঠানে টাইবেরিয়াসের মনে ধরে যায় এক সেবাদানরত ভৃত্যকে। তার মনের মধ্যে ইচ্ছে জাগে তার সাথে সমকামে লিপ্ত হবার। টাইবেরিয়াসের ইচ্ছে বলে কথা পূরণ তো হতেই হবে। ক্ষমতাবলে সম্রাটের কাছে ধরে আনা হয়েছিল ওই ভৃত্যসহ সেই সাথে থাকা তার ভাইকে, যে কিনা অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজিয়েছিল। এরপর চরিতার্থ তার মনের অসুস্থ কামনা। পরবর্তীকালে এই নিয়ে ওই দুই ভাই নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। যার কারনে তাদের উপর টাইবেরিয়াস ক্ষেপে গিয়ে তাদের পা ভেঙে দিয়েছিল।

তিনি যদি কোন ব্যক্তিকে শত্রু বলে মনে করতেন তাহলে তার সাথে ছলনা করে টাইবেরিয়াস নিজের সাথে তাকে মদ্যপানের আমন্ত্রণ জানাতেন। এরপর ওই ব্যক্তিটি যখন অতিরিক্ত মদ্যপান করার ফলে মাতাল হয়ে গেলেই শুরু হতো সম্রাটের খেলা। তিনি ধারণাকৃত শত্রুর জননাঙ্গ বেঁধে ফেলতেন। তারপর চলত তার উপর নির্যাতন। ভরপেটে এমন নির্যাতনের মুখে মারাত্মক প্রস্রাবের বেগ চাপলেও সেই ব্যক্তির কিছুই করার ক্ষমতা থাকতো না।

৪. গাধার ভেতর ঢুকিয়ে রাখা

আমাদের চলিত কথাগুলির মধ্যে “গাধা” এই প্রাণীর নাম অনেক বেশি ব্যবহার করে থাকি। যেমন- আমরা অমানুষিক পরিশ্রম বোঝাতে চলিত কথা হিসাবে ব্যবহার করি ‘গাধার মতো খাটুনি’, আবার কারো স্থূলবুদ্ধি বোঝাতে আমরা বলি ‘গাধার মতো বুদ্ধি/ কথাবার্তা ’ ইত্যাদি ধরনের কথাগুলো। আমাদের গাধাকে নিয়ে যতই রসিকতা করি না কেন প্রাচীন রোমের মানুষদের কাছে গাধা ছিল এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। কিন্তু কেন? এই প্রশ্ন উঠছে মনে ওঠাটাই স্বাভাবিক।

আসলে এই নিরীহ প্রাণীটি ভয়ের কারন ছিল না, ভয়ের কারন ছিল এক শাস্তির সাথে এই প্রাণীর সংশ্লিষ্টতার জন্যই। এই বিষয়ে প্রমান পাওয়া যায় অ্যাপুলিয়াস (ল্যাটিন ভাষায় গদ্য রচয়িতা, প্লেটোনীয় দার্শনিক এবং বক্তা) ও লুসিয়ানের (গ্রীক ব্যঙ্গসাহিত্য রচয়িতা এবং বক্তা) সাহিত্যকর্ম থেকে।

এই শাস্তিটি দেওয়ার জন্য প্রথমে একটি গাধাকে মেরে ফেলে তার পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করা হত। এরপর অপরাধীর পরনের জামা-কাপড় খুলে নিয়ে তার হাত-পা বেঁধে ঢুকিয়ে দেওয়া হত গাধার ভেতর। তারপর গাধার পেট সেলাই করে দেওয়া হত তবে বাইরে রাখা হত ওই ব্যক্তিটির মাথা। তবে এখানেই শেষ নয়, বলা যেতে পারে যে এরপর থেকে শুরু হবে আসল কষ্ট।

ওই গাধার মৃতদেহ সহ গাধার ভেতরে থাকা ব্যক্তিটিকে উত্তপ্ত রৌদ্রের নিচে রেখে দেওয়া হত। সূর্যের তাপে গাধার মৃতদেহটি ধীরে ধীরে পচন ধরতে শুরু করত। অন্যদিকে গাধার ভেতরে থাকা ওই ব্যক্তিটির গরমে প্রান বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এরপর ওই মৃতদেহের পচা অংশে জন্ম নেয়া পোকামাকড় ওই ব্যক্তিটির শরীরেও উঠতে শুরু করতো এবং আকাশ থেকে নেমে আসা শকুনের দল তার শরীরে  ঠোকরাতে শুরু করত। বেশ কিছু এই নির্মম নির্যাতন সহ্য করার পর অবশেষে সেই ব্যক্তিটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত।

৫. মানুষ হতো বুনো শুকরের খাবার

রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে যখন হেলিওপোলিস ছিল, সেই সময়কার একটি নির্যাতনের কথার বর্ণনা দিয়েছিলেন সেইন্ট গ্রেগরি।

যদি বড় ধরনের কোন অপরাধে কোনো কিশোরী বা তরুণী অভিযুক্ত হত তাহলে প্রথমে সেই নারীর শরীর থেকে তার পরনের জামা-কাপড় সবার সামনে খুলে নিয়ে তার পেট চিরে ফেলা হত। সেই নারীটি যখন যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকত সেই সময়  শাস্তি প্রদানকারীরা তার পেটের কাটা অংশটি যব দিয়ে ভরতে ব্যস্ত থাকত। এরপর ভরা হওয়ার পর তার পেট সেলাই করে দেওয়ার পর তাকে বুনো শূকরের সামনে ছেড়ে দেয়া হত। তারপর সেই নারীটিকে এই প্রাণীটি  টুকরো টুকরো করে ফেলতো।

এই নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন সেইন্ট অ্যাগনেস, সেইন্ট প্রিস্কা ও সেইন্ট ইউফেমিয়া অফ অ্যাকুইলেইয়া। তবে এই শাস্তির আরো একটি মর্মান্তিক দিক আছে যা সবচেয়ে ভয়ানক ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীটি হত কুমারী। তবে রোমান আইন অনুযায়ী কুমারীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল না। সেই কারনে দণ্ডিত কুমারী নারীকে একজন গ্ল্যাডিয়েটরের হাতে তুলে দেয়া হত। এরপর সেই নারীকে ওই গ্ল্যাডিয়েটর ধর্ষণ করার পরই তার উপর শুরু হত শাস্তির পরবর্তী ধাপগুলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

ভগবান শিবের মাথায় কেন চাঁদ থাকে? কেনই বা গলায় সাপ থাকে জানেন?ভগবান শিবের মাথায় কেন চাঁদ থাকে? কেনই বা গলায় সাপ থাকে জানেন?

দেবাদিদেব মহাদেব যাকে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সংহারকর্তা বলা হয়। তাঁর পরনে থাকে বাঘের ছাল, মাথায় থাকে গঙ্গা ও অর্ধচন্দ্র এবং হাতে থাকে ত্রিশূল ও ত্রিশূলে জড়ানো ডমরু, ত্রিনয়ন, ও রুদ্রাক্ষ। কিন্তু

ভারতবর্ষের জেমস বণ্ড! পাকিস্তানের পরমানু প্রজেক্ট ধ্বংস করতে কি করছিলেন অজিত দোভাল?ভারতবর্ষের জেমস বণ্ড! পাকিস্তানের পরমানু প্রজেক্ট ধ্বংস করতে কি করছিলেন অজিত দোভাল?

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মিঃ অজিত দোভাল। একটা মানুষের যোগ্যতা কতটা থাকলে ৭৯ বছর বয়সেও দেশের এমন গুরুত্বপূর্ন পদের দায়িত্ব দেওয়া যায় তা সহজেই অনুমেয়। অজিত দোভাল তাঁর সারা জীবনে

নিমতলা ঘাটের কথানিমতলা ঘাটের কথা

রানা চক্রবর্তীঃ বলা হয় যে, নিজের মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষ নাকি তাঁর সমস্ত অপরাধ থেকেও মুক্তি পেয়ে যায়। কিন্তু মানুষের দেহের শেষচিহ্ন লীন হওয়ার সময়ে কেউ শ্মশানে গেলে কিন্তু সেকথা

‘রামকৃষ্ণ ও বঙ্কিম – একটি বিতর্কিত অধ্যায়’ (প্রথম পর্ব)‘রামকৃষ্ণ ও বঙ্কিম – একটি বিতর্কিত অধ্যায়’ (প্রথম পর্ব)

রানা চক্রবর্তীঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্বন্ধে একটা কাহিনী বহুকাল ধরেই নির্বাধায় প্রচলিত থাকতে থাকতে বর্তমানে সেটা প্রায় একটা প্রবাদে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সেই কাহিনীটি সংক্ষেপে হল – রামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্রের